আরজি কর হাসপাতালের(Rgkar Hospital) প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের(Sandip Ghosh) কীর্তি জানলে অবাক হয়ে যাবেন। শুধু দুর্নীতির অভিযোগ না তাঁর বিরুদ্ধে, সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে রয়েছে স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগও। আজ্ঞে হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন। গুণধর প্রাক্তন অধ্যক্ষ নিজের স্ত্রীকে ছাড় দেননি।
মঙ্গলবারই তাঁকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ছুটিতে পাঠিয়েছে হাইকোর্ট। নতুন কোনও মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে তিনি যোগদান করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।এরই মধ্যে সন্দীপবাবুর বিরুদ্ধে মুখ খুলে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন তাঁর পুরনো প্রতিবেশীরা। তাঁদের দাবি, ‘প্রসবের ১৪ দিনের মাথায় স্ত্রীর পেটে লাথি মেরেছিলেন সন্দীপ ঘোষ।’
বেশ কয়েক বছর আগে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের মল্লিকবাগানে থাকতেন সন্দীপবাবু। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে তখন চিকিৎসা করতেন এই অস্থি বিশেষজ্ঞ। তবে সন্দীপবাবুর আচরণ নিয়ে আপত্তি ছিল অনেকেরই। তার থেকে বেশি আপত্তি ছিল তাঁর মায়ের আচরণ নিয়ে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘নিজের বাড়িতেও চেম্বার করে রোগী দেখতেন সন্দীপবাবু। স্থানীয়রা অনেকেই তাঁকে দেখাতে যেতেন। তবে অতিরিক্ত ফিজ নিতেন তিনি।’ ওই ব্যক্তি জানান, সন্দীপবাবুর বিরুদ্ধে প্রসবের ১৪ দিনের মাথায় তাঁর স্ত্রীর পেটে লাথি মারার অভিযোগ উঠেছিল। সেদিন চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা সন্দীপবাবুর বাড়িতে যান। জানতে পারেন, স্ত্রীর পেটে লাথি মেরেছেন সন্দীপ। তখন স্ত্রী সন্তান প্রসব করেছেন মাত্র ১৪ দিন হয়েছে। স্ত্রীকে উদ্ধার করে স্থানীয়রাই হাসপাতালে নিয়ে যান। সঙ্গে নিয়ে যান সদ্যোজাতকেও। এমনকী সদ্যোজাতের কয়েকটি জামা চাইলেও সন্দীপবাবুর মা দেননি বলে অভিযোগ। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানান সন্দীপবাবুর স্ত্রীর বেশ কয়েকটি সেলাই ফেটে গিয়েছে।প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ছিলেন সন্দীপবাবুর স্ত্রী। কলকাতার হাসপাতালে যোগদানের পর তার পর থেকেই বারাসতের বাড়িতে যাতায়াত কমিয়ে দেন সন্দীপ। অবশেষে বাড়ি বিক্রি করে পাকাপাকিভাবে কলকাতায় চলে যান তিনি।
জানা যায়, তৃণমূল ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত সন্দীপ ঘোষের আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ হিসাবে স্থলাভিষেক হয় ২০২১ সালে। ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে পদোন্নতির পর আরজি করে আসেন তিনি। প্রথমবার আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষের চেয়ার থেকে সরিয়ে তাঁকে পাঠানো হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে। সে বার তিনি ফিরে এসেছিলেন মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে। এরপর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আবার বদলি। সে বার ফিরতে সময় নিয়েছিলেন ২১ দিন।
আর তৃতীয়বার, তিনি নিজেই পদত্যাগ করলেন। অধ্যক্ষ থাকাকালীন সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ছাড়াও সরকারি অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে। কোভিডের সময় অত্যাধুনিক যন্ত্র কিনেছিল আরজি কর হাসপাতাল। খরচ হয়েছিল ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। পরে জানা যায়, এই যন্ত্রের বাজার মূল্য ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। সন্দীপ ঘোষ নাকি টেন্ডারের ক্ষেত্রেও নিজের প্রভাব খাটিয়েছেন। ল্যাব টেকনিশিয়ান নিয়োগের ক্ষেত্রেও তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে স্বজনপোষণের অভিযোগ। অবৈধভাবে ইন্টার্ন নিয়োগের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। হাসপাতালের বর্জ্য বাংলাদেশে পাচার করার মতো গুরুতর অভিযোগও আছে তালিকায়।