অন্ধকার কাটিয়ে অবশেষে সূর্যোদয় হল রামধনুর দেশে!! অস্ট্রেলিয়াকে দাপটের সঙ্গে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শুধু তাই নয়, ‘চোকার্স’ তকমা ধুয়েমুছে সাফ করে দিয়ে ২৮ বছর পরে প্রথমবার আইসিসি ট্রফি জয়ের স্বাদ পেলেন প্রোটিয়ারা। ১৯৯৮ সালে আইসিসি নক-আউট চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরবর্তী তিন দশকে বারবার ট্রফি জয়ের সামনে এসেছেন তাঁরা। কখনও সেমিফাইনালে হেরেছেন। বৃষ্টির জেরে জয়ের জায়গা থেকে অবিশ্বাস্যভাবে হেরে গিয়েছেন। কখনও হেরে গিয়েছেন ফাইনালে উঠে। ছিঁটেফোটা মেলেনি ভাগ্যের সহায়তা। চোখের জলে মাঠ ছাড়তে হয়েছে প্রোটিয়াদের। এমনকী গত বছর ২৯ জুন ভারতের বিরুদ্ধে নিজেদের হাতের মুঠোয় থাকা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফিটা ছুঁতে পারেননি। সেই ঠিক ঘটনার পাক্কা ৩৫০ দিনের মাথায় শাপমুক্তি হল দক্ষিণ আফ্রিকার। জিতে নিল বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ।
আর দক্ষিণ আফ্রিকার যে শাপমুক্তি ঘটাতে চলেছে, তা তৃতীয় দিনেই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। জয়ের জন্য চতুর্থ দিনে মাত্র ৬৯ রান দরকার ছিল প্রোটিয়াদের। হাতে ছিল আট উইকেট। ক্রিজে ছিলেন শতরান করে ফেলা এডেন মার্করাম এবং অর্ধশতরান করে ফেলা তেম্বা বাভুমা। কিন্তু দলটার নাম যেহেতু দক্ষিণ আফ্রিকা, তাই একটা ভয় সকলের মনেই ছিল – আবার ফসকে যাবে না তো? আবার হৃদয় ভাঙবে না তো?
সেই ভয়টা আরও চেপে বসে চতুর্থ দিনের ১৮ নম্বর বলটায়। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের বলে আউট হয়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাপ্টেন বাভুমা। মার্করামের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে তিনি যে ১৪৭ রানের জুটি গড়েন, সেটাই দক্ষিণ আফ্রিকাকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিল। সেই পরিস্থিতিতে বাভুমা আউট হয়ে যাওয়ায় প্রোটিয়া শিবিরের মধ্যে ফের সেই প্রশ্নটা উঠতে শুরু করে, ‘আমরা জিততে পারব তো?’

ওই প্রশ্নটার উত্তর ইতিবাচক করে তোলার দায়িত্বটা নেন মার্করাম। গত বছর ২৯ জুন অধিনায়ক হিসেবে যে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল, সেরকম যাতে ফের না হয়, সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের সামলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে যান। শেষপর্যন্ত জয়ের জন্য যখন মাত্র ছয় রান বাকি, তখন আউট হয়ে যান।
ততক্ষণে অবশ্য ১৩৬ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচটা পুরোপুরি প্রোটিয়াদের হাতে নিয়ে চলে আসেন মার্করাম। আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে ফিনিশিং লাইনটা পার করিয়ে দেন কাইল ভেরেইন এবং ডেভিড বেডিংহ্যাম। মিচেল স্টার্কের বলে ভেরেইনের শটটা কভার পয়েন্টের দিকে যেতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে পুরো লর্ডস, পুরো দক্ষিণ আফ্রিকা, সম্ভবত পুরো বিশ্বও (অবশ্যই অস্ট্রেলিয়া বাদে)।