২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২৬ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি জঙ্গিরা। এর এক মাসের মধ্যে টিআরএফ-এর বিরুদ্ধে প্রস্তুত ডসিয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের (ইউএন) কাছে হস্তান্তর করেছিল ভারত। এরই ফলশ্রুতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টিআরএফকে বৈশ্বিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। সূত্রের খবর, দিন চারেক আগে ভারতকে জানানো হয়েছিল যে টিআরএফকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসাবে ঘোষণা করছে। ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’ নীতিতে ভারত ও আমেরিকা যে কোনও ছাড় দেবে না, এই ঘোষণা তা পাকিস্তানের কাছে স্পষ্ট বার্তা।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে জোর ধাক্কা খেয়েছে পাকিস্তান। প্রসঙ্গত, গত ২৭-২৯ মে ওয়াশিংটন সফরের সময় বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি মার্কিন বিদেশ দফতরের হাতে টিআরএফ সংক্রান্ত ডসিয়ার হস্তান্তর করেছিলেন বলে দানা গিয়েছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ১২৬৭ নিষেধাজ্ঞা কমিটিকেও একই ধরনের ব্রিফিং দিয়েছিলেন মিশ্রি। টিআরএফ হল লস্করের মুখোশ। শেখ সাজ্জাদ গুল ওরফে সাজ্জাদ আহমেদ শেখের এই সংগঠনের কলকাঠি নাড়েন। এই সাজ্জাদকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই লস্কর-ই-তৈবার ‘কাশ্মীরি মুখ’ বানিয়েছিল।
২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে কাশ্মীর উপত্যকায় বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলা চালিয়েছিল টিআরএফ। ২০২৩ সালে মধ্য কাশ্মীরে গ্রেনেড হামলা, ২০২৩ সালে অনন্তনাগের বিজবেহারা এলাকায় জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের উপর অতর্কিত হামলা, গাগাঙ্গির, জেড-মোড় টানেল হামলা এবং ২০২৪ সালে গান্ডেরবাল হামলা, সর্বশেষ পহেলগাঁও গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত এই টিআরএফ।

কে এই সাজ্জাদ গুল? সাজ্জাদ গুল বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডিতে বসবাস করে। জম্মু ও কাশ্মীরে চরমপন্থা, জঙ্গি নিয়োগ, সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সঙ্গে জড়িত সে। তার ভাই পারভেজ আহমেদ শেখ নব্বইয়ের দশকে কাশ্মীর উপত্যকায় জঙ্গি ছিল। পারভেজ তার পরিবারের সঙ্গে সৌদি আরব এবং পরে পাকিস্তানে যায়। সে উপসাগরীয় দেশগুলিতে অবস্থিত ভারতীয় পলাতকদের সাথে সন্ত্রাসী অর্থায়ন এবং হাওয়ালা কার্যকলাপের সাথে জড়িত। ২০২২ সালে ইউএপিএ-র আওতায় সাজ্জাদ গুলকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করা হয়েছিল ভারতে।
তিনি শ্রীনগরের এইচএমটি এলাকার বাসিন্দা। তিনি শ্রীনগরে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন এবং তারপরে বেঙ্গালুরু থেকে এমবিএ করেন। তারপরে তিনি কেরালায় একটি ল্যাব টেকনিশিয়ান কোর্স করেন এবং শ্রীনগরে ফিরে ডায়াগনস্টিক ল্যাব স্থাপন করেন এবং লস্কর-ই-তৈয়বাকে সহায়তা প্রদান শুরু করেন। দিল্লির নিজামুদ্দিন রেলওয়ে স্টেশন থেকে তাকে গ্রেফতার করে এবং তার কাছ থেকে পাঁচ কেজি আরডিএক্স উদ্ধার করা হয়। সে দিল্লিতে বোমা বিস্ফোরণের ছক কষেছিল এবং গোপন আস্তানা পুনর্বিবেচনার সাথে জড়িত ছিল। ২০০৩ সালের ৭ আগস্ট গুল ও তার দুই সহযোগীকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সাজার মেয়াদ শেষ করে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ২০১৭ সালে সপরিবারে পাকিস্তানে পালিয়ে যায় সাজ্জাদ। ২০১৯ সালে আইএসআই-ই সাজ্জাদকে টিআরএফ প্রধান হিসেবে বেছে নিয়েছিল। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামা বিস্ফোরণের পরে আইএসআই এই পদক্ষেপ করেছিল।