পঞ্চম বেতন কমিশনের অধীনে বকেয়া ডিএ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট গত ১৬ মে নির্দেশ দিয়েছিল ২৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা মিটিয়ে দেওয়ার। এই আবহে একাধিক রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, সরকার নাকি সেই নির্দেশে কিছ বদল আনার আবেদন জানিয়ে ফের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে। তবে তারা রিভিউ পিটিশন করবে না। এরই মধ্যে এই মামলায় ৪ সপ্তাহের মধ্যে সরকার পক্ষকেই লিখিত আকারে তাদের বক্তব্য এবং কাজের অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছিল। অবশ্য সময়সীমা পার হলেও তা জমা পড়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই জবাব এখনও জমা পড়েনি।
এর আগে সম্প্রতি বিভিন্ন দফতর এবং সরকারি সংস্থাগুলির কাছে কর্মচারীদের সংখ্যা জানতে চেয়েছিল অর্থ দফতর। এরই মাঝে রিপোর্টে দাবি করা হয়, বকেয়া ডিএ মেটানো নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশের পরিবর্তন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে রাজ্য সরকার। যদিও বর্তমানে গরমের ছুটি চলছে সুপ্রিম কোর্টে। তবে শীর্ষ আদালতের নির্দেশের কিছু বিষয় নিয়ে ব্যাখা চাইতে পারে রাজ্য
রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, বকেয়া ডিএ-র অংশ মেটাতে নতুন পদ্ধতি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয় নবান্ন। নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করে কর্মীদের বকেয়া ডিএ দেওয়ার পথে হাঁটছে সরকার। একটি বেসরকারি সংস্থাকে সেই প্রযুক্তি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। এই ব্যবস্থায় সরকারি কর্মীদের নিজস্ব পোর্টাল ‘ইন্টিগ্রেটেড ফিনানশিয়াল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-এ ২০০৯ সালে ‘রোপা’ কার্যকর হওয়ার পরে কার্যকালের মেয়াদ সংক্রান্ত তথ্য জানাতে হবে। অর্থাৎ, সরকারি কর্মচারীরা ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত নিজেদের কার্যকালের তথ্য জানাবেন।

সরকারি কর্মীরে সেই প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকারকে তাদের তথ্য প্রদান করলে অর্থ দফতর সহজেই নির্ধারণ করতে পারবে, কোন সরকারি কর্মীর কতটা বকেয়া ডিএ প্রাপ্য। মনে করা হচ্ছিল, ৪ সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া ডিএ মেটানোর কাজ কতটা এগিয়েছে, সেই সংক্রান্ত যে রিপোর্ট রাজ্য সরকারকে জমা দিতে বলা হয়েছিল, এই নয়া প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ অনেকটাই সহজ হবে সরকারের জন্য। যদিও সেই রিপোর্ট সরকার জমা করেছে কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও জবাব পাওয়া যায়নি।প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে আছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার কর্মীদের বকেয়া ডিএ মামলা। প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ সংক্রান্ত যে মামলাটি চলছে, সেটা পঞ্চম বেতন কমিশন সংক্রান্ত। ২০১৬ সাল থেকে সেই মামলা চলছে। এই মামলাটি স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল, কলকাতা হাইকোর্ট হয়ে সুপ্রিম কোর্টে এসেছে। প্রথমে স্যাটে জয় পেয়েছিল রাজ্য সরকার। তারপর থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে জয় পেয়েছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা।
২০২২ সালে যখন প্রথমবার ডিএ মামলা সুপ্রিম কোর্টে উঠেছিল, তখন এই মামলার বিচারপতি ছিলেন জাস্টিন দীনেশ মাহেশ্বরী এবং জাস্টিস ঋষিকেশ রায়। এরপর এই মামলাটি তালিকাভুক্ত হয়েছিল জাস্টিস ঋষিকেশ রায় এবং জাস্টিস দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে। আবার ২০২৩ সালের মার্চ মাসে মামলাটি ওঠে জাস্টিস দীনেশ মাহেশ্বরী এবং জাস্টিস সঞ্জয় কুমারের এজলাসে। এরপর ২৮ এপ্রিল, ২০২৩ সালের ডিএ শুনানি শেষবারের মতো উঠেছিল এই এজলাসে। এরপর অবসর নেন জাস্টিস দীনেশ মাহেশ্বরী। তারপর এই মামলার বিচারপতি পদে থাকা জাস্টিস ঋষিকেশ রায় অবসর নেন ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি।