ইংল্যান্ডে টেস্টেও রোহিতকে অধিনায়ক করার কারণ কী কী?

Spread the love

India vs England: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পরেই নিশ্চিত হল রোহিত শর্মার(Rohit Sharma) টেস্ট নেতৃত্ব! ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে জয়লাভ করার কিছুক্ষণ পরেই নিশ্চিত হয়ে যায় যে, ইংল্যান্ড সফরে (জুন-অগস্ট) রোহিত শর্মাই ভারতের টেস্ট অধিনায়ক থাকবেন। জানা গিয়েছে, দুবাইয়ে ফাইনালের পর তখনও ঘামে ভেজা জার্সিগুলো শুকায়নি, আর আইসিসির দুই মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাসও তখনও পুরোপুরি উপলব্ধি করা হয়নি, ঠিক তখনই রোহিত পেয়েছিলেন গুরুত্বপূর্ণ সেই আস্থার বার্তা।

এর মাধ্যমেই শেষ হয় ভারতের ক্রিকেটে নেতৃত্ব সংক্রান্ত সেই জল্পনা-কল্পনা, যা এক মাস আগে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফির সময় চরমে পৌঁছেছিল। পাশাপাশি, এটি নিশ্চিত করা হয়েছে যে, আইপিএলের সময় দলীয় অধিনায়কত্ব নিয়ে কোনও নাটক হবে না, যা অনেকের কাছেই টেস্ট এবং ওডিআই ক্রিকেটের সমান গুরুত্বপূর্ণ।

কখন নেওয়া হয়েছিল এই সিদ্ধান্ত?

ঠিক কখন রোহিত শর্মার ভবিষ্যৎ অধিনায়কত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি রিপোর্টে এই বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। জানা যাচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে যখন রোহিত শর্মা কিউয়ি বোলারদের মাঠের বাইরে পাঠাচ্ছিলেন, তখনই নাকি ছবিটা তৈরি হচ্ছিল। এবং যখন রোহিত শর্মা সঠিকভাবে স্পিনারদের ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে ফাঁদে ফেলছিলেন। তখনই মোটামুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গিয়েছিল।

যারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে অবগত, তারা জানান যে এটি মূলত রোহিতের নেতৃত্ব দক্ষতার জন্যই করা হয়েছে। কারণ, ভারত ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে অনেক বিকল্প রাখে। যশস্বী জসওয়াল, অভিষেক শর্মা, শুভমন গিল, সঞ্জু স্যামসন এবং কেএল রাহুলের মতো ব্যাটাররা আছেন। কিন্তু, এমন কোনও নেতা নেই যিনি রোহিতের মতো কৌশলী। টেস্ট ক্রিকেটে যখন পরিস্থিতি প্রতিকূল থাকে, তখন ধৈর্য এবং কৌশলগত চিন্তাধারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, যা রোহিতের মধ্যে রয়েছে।

ইংল্যান্ডে নেতৃত্বের কঠিন পরীক্ষা

অনেকে মনে করেন, ইংল্যান্ডের পিচ মানেই পেসারদের স্বর্গরাজ্য, যেখানে ব্যাটসম্যানরা টিকতেই পারে না। তবে বাস্তবে দেখা যায়, একবার যদি প্রথম কয়েক ওভার সামলে নেওয়া যায়, তাহলে ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস গড়তে পারেন।

‘ড্যাডি হান্ড্রেডস’ – এই শব্দবন্ধটি এসেছে ইংল্যান্ড থেকেই, কিংবদন্তি গ্রাহাম গুচের কাছ থেকে। তিনি ব্যাটসম্যানদের শতরানকে আরও বড় করতে বলতেন, যা পরে তার অধীনে আলেস্টার কুক দারুণভাবে রপ্ত করেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ভারত গুচ এবং কুক – দুজনের কাছ থেকেই বড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ এবং ভারতের অতীত

ইংল্যান্ডে অধিনায়কদের পরীক্ষা কঠিন। এমএস ধোনি, যিনি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সফল ছিলেন, টেস্টে ইংল্যান্ডে বারবার হোঁচট খেয়েছেন। তিনি ইংল্যান্ডে মোট ৯টি টেস্ট ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যার মধ্যে ভারত হেরেছে ৭টিতে।

২০১১ সালে ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ হারার সময়, দলের এক সদস্য জানিয়েছিলেন যে ধোনি দলের ব্যাটিংয়ের সময় ঘুমিয়ে পড়তেন। মাঠেও তার মধ্যে একধরনের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যেত। অন্যদিকে, অতিরিক্ত আগ্রাসনও সবসময় কাজে আসে না। ২০১৮ সালে বিরাট কোহলির অধীনে ভারত ১-৪ ব্যবধানে সিরিজ হারে।

শেষবার ভারত ইংল্যান্ডে সিরিজ জিতেছিল ২০০৭ সালে, যখন দলনেতা ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। তার নেতৃত্বে সেই দলে ছিলেন তেন্ডুলকর, গঙ্গোপাধ্যায়, কুম্বলে, লক্ষ্মণ এবং জাহির খানের মতো কিংবদন্তিরা। পরবর্তী সময়ে ভারত অস্ট্রেলিয়ায় জিতলেও, ইংল্যান্ড জয় অধরাই থেকে যায়। বিরাট কোহলি, জসপ্রীত বুমরাহ, রবীন্দ্র জাদেজা এবং কেএল রাহুলের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা রোহিতের বর্তমান দলে রয়েছেন। তাই তিনিও প্রতিপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন।

রোহিত বনাম বুমরাহ – ভবিষ্যৎ অধিনায়কত্ব

বুমরাহ নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতের অধিনায়ক হওয়ার যোগ্য। তবে আপাতত রোহিত তার জায়গায় ঠিকই আছেন। রোহিত আইপিএলে ৬টি ট্রফি জিতেছেন, ইংল্যান্ডে ব্যাজবল-ধারার বিরুদ্ধে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে দুটি আইসিসি শিরোপা জিতেছেন। এই অর্জনই তার টেস্ট নেতৃত্বে থাকা নিশ্চিত করেছে, যদিও তিনি নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে হেরেছেন।

আইপিএল অবশ্য রোহিতের জন্য সহজ হবে। এখানে চাপ থাকবে হার্দিক পান্ডিয়ার ওপর, যিনি ২০২৪ সালে ভুলে যাওয়ার মতো একটি মরশুম কাটিয়েছেন। রোহিত এখন তার ব্যাটিং ফর্ম ফিরে পেয়েছেন। তিনি আবারও নিখুঁত টাইমিংয়ে পেসারদের স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারছেন, মিড-উইকেটের ওপর দিয়ে দুর্দান্ত শট খেলছেন। এটা তার জন্য সেই পুরনো রোহিত হওয়ার সুযোগ, সেই তরুণ প্রতিভা, যিনি একসময় ডেকান চার্জার্সের জার্সিতে আলো ছড়িয়েছিলেন।

তবে, এই স্বাধীনতার সময়টা খুব সংক্ষিপ্ত। কারণ, ইংল্যান্ডে ফেরার পর তাঁকে আবার সেই দায়িত্বশীল নেতা হতে হবে, যিনি তার সেনাবাহিনীর ভবিষ্যৎ এবং সাফল্যের ভার কাঁধে তুলে নেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *