ইউনুসের সুরেই সুর মেলালেন তাঁর প্রিয় পাত্র নাহিদ

Spread the love

আশঙ্কা একটা ছিলই। যা নিয়ে আলোচনা, জল্পনাও চলছিল বা এখনও চলছে। এবার আশঙ্কার সেই সুরই শোনা গেল সদ্য মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারের পদ ছেড়ে নতুন গড়া রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক বনে যাওয়া নাহিদ ইসলামের গলায়।

কী বললেন তিনি? তিনি বললেন, এবছর অন্তত বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়ার বিশেষ সম্ভাবনাই নেই। কারণ, দেশ এখনও অস্থির। তাই, আপাতত নির্বাচনে যাওয়া সমীচীন হবে না বলেই মনে করছেন তিনি। তাহলে কবে হবে নির্বাচন? বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে আপাতত এই প্রশ্নের কোনও নির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি।

গত মাসেই মহম্মদ ইউনুসের কেয়ারটেকার সরকারের অন্তর্বর্তী উপদেষ্টার পদ ছেড়েছেন নাহিদ ইসলাম। তারপরই তাঁর মতো এক ঝাঁক তরুণের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মাটিতে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে নতুন রাজনৈতিক দল – জাতীয় নাগরিক পার্টি বা সংক্ষেপে এনসিপি-র। সেই দলের আহ্বায়ক হয়েছেন নাহিদ।

রাজনৈতিক পরিসরে নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম সংবাদ সংস্থা রয়টার্স-কে সাক্ষাৎকার দেন নাহিদ ইসলাম। সেই সাক্ষাৎকারেই চলতি বছর নির্বাচন হওয়া নিয়ে ঘোর সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’-এ এই সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে নাহিদের যে মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে, তা হল – ‘গত সাত মাসে আমরা সবাই আশা করেছিলাম, স্বল্পমেয়াদি সংস্কারের মাধ্যমে পুলিশিং ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে। এটা একটা মাত্রায় ঘটেছে, কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা মতো হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশিং ব্যবস্থায় আমি মনে করি না, একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে।’ প্রসঙ্গত, নাহিদ কিন্তু এই মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক নেতা হিসাবে, ইউনুসের সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে নয়।

অর্থাৎ – মোদ্দা কথা হল, কখনও সংস্কারের দোহাই, তো কখনও আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা – কোনও না কোনও অজুহাত খাড়া বাংলাদেশের নির্বাচন যতটা সম্ভব পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যে কথা আগে একাধিকবার মহম্মদ ইউনুসের গলায় শোনা গিয়েছে, এখন সেই একই সুরে বাজছেন তাঁর অন্যতম স্নেহের পাত্র নাহিদ ইসলাম। সরকার থেকে বেরিয়ে গিয়ে সরকারকে সমর্থন করছেন তিনি।

বিএনপি-সহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলি ঠিক এই জায়গাটি নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে আপত্তি ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে। তাদের বক্তব্য, পিছন দরজা দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষপদ দখল করার পর আর সেই পদ ছাড়তে চাইছেন না ইউনুস।

আগেই অনুমান করা হয়েছিল, সংস্কারের অছিলায় ইউনুস ভোট পিছিয়ে দিতে চাইছেন, কারণ – এই সময়ের মধ্য়ে নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে তিনিও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচনী ব্যবস্থায় ঢুকে পড়তে চান। যাতে ভোটে জিতে ক্ষমতা আরও ভালোভাবে দখল করা যায়।

এই তত্ত্ব কতটা সঠিক, তার উত্তর দেবে সময়। তবে, নতুন দল তো ইতিমধ্যেই গঠিত হয়েছে এবং সেই দলের মাথায় বসানো হয়েছে ইউনুসেরই প্রিয় পাত্রকে। প্রশ্ন উঠছে, পরবর্তী নির্বাচনের আগে ঘর গুছোতেই কি সময় কিনছেন তাঁরা?

এদিকে, বিবিসি-কে সাক্ষাৎকারে ইউনুসও জানিয়েছেন ভোট হতে পারে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে। অন্যদিকে, বিএনপি আবার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে এমাসের মধ্যেই ভোটের রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে রাজনৈতিক দলগুলিই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে পদক্ষেপ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *