ইমাম–মোয়াজ্জেমদের সঙ্গে বৈঠক করে শান্তির বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওয়াকফ আইন নিয়ে যে হিংসার পরিবেশ তৈরি হয়েছে বাংলায় তার জন্য সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আক্রমণ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একেবারে তুলোধনা করেছেন অমিত শাহকে। কংগ্রেসকেও নিশানা করেছেন। আর মঞ্চে ইমাম–মোয়াজ্জেমদের সঙ্গে শিখ এবং হিন্দু পুরোহিতদের পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে শান্তি ও ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন। তার সঙ্গেই এই ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় ইন্ডিয়া জোটকে একসঙ্গে লড়াই করার আহ্বান করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
আজ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে সরাসরি এই ওয়াকফ আইন যে বাংলার সরকার মানবে না তা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুর্শিদাবাদ এবং মালদায় যে হিংসার ঘটনা ঘটেছে তার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিএসএফকে দায়ী করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চ থেকে বলেন, ‘ওয়াকফ নিয়ে কিছু অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। যেখানে গণ্ডগোল হয়েছে সেটা মালদার এলাকা। কংগ্রেস জিতবে আর গোলমাল হলে জনপ্রতিনিধিরা নিয়ন্ত্রণ করতে পথে নামবেন না সেটা আমি আশা করি না। প্ররোচনামূলক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। এটা প্রি প্ল্যান্ড কমিউনাল রায়ট। যে আইন করা হয়েছে সেটা অ্যান্টি ফেডারাল আইন। আমি ইন্ডিয়া টিমকে আবেদন করব, একসঙ্গে এটার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’
এরপরই সংবিধানকে যে বিজেপি মানছে না সেটা তুলে ধরেন। ওয়াকফ বিল নিয়ে এসে সংসদে শরিকদের ধরে তা পাশ করানো হয়েছে। সংবিধান সংশোধন করে সেটা করা হয়নি। আর বাংলায় যে গোলমাল লাগানো হচ্ছে তার জন্য অমিত শাহ দায়ী বলে তোপ দেগেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘বিজেপি বাইরের গুন্ডা নিয়ে এসে গোলমাল করেছে। রামনবমীতে করার পরিকল্পনা ছিল। সেটা করতে পারেনি। তাই এভাবে করেছে। আমি খুঁজে বের করব বিএসএফ কাদের হাত করে এই কাজ করেছে। দেখুন, চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশবাবু চুপচাপ বসে আছেন। ক্ষমতার জন্য এসব করছে। ওয়াকফ আইনকে বদল করতে চাইলে সংবিধান সংশোধন করেননি কেন? এটা চালাকি করা হয়েছে। এভাবে হয় না। সংবিধান সংশোধন করলে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা করতে হতো।’
এরপরই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে শান্তির বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইমাম থেকে শুরু করে মোয়াজ্জেম এবং হিন্দুদের একসঙ্গে থাকতে বলেছেন। এটাই বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি। মুর্শিদাবাদ, সূতি, ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জ এলাকায় যে হিংসা হয়েছে সেটা পূর্বপরিকল্পিত বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘যদি আমার উপর বিশ্বাস করেন, তাহলে আপনারা শান্ত থাকুন। বিজেপির প্ররোচনায় পা দেবেন না। সৌদি আরবে গেলে কার সঙ্গে দেখা করেন। দুবাই গেলে কার আতিথেয়তা নেন? দেশের মধ্যে একরকম কথা। আর দেশের বাইরে আর একরকম কথা। লজ্জা করে না ডবল ইঞ্জিন সরকার। ওয়াকফ সম্পত্তি অনেক হিন্দুরাও দান করেছে। হিন্দুরাও অনেকে ওই ওয়াকফ জমিতে থাকেন। একটা বছর পর নতুন ঘটনা ঘটবে। নতুন সরকার গড়বে। তখন আশা করি হামাগুড়ি বাবু থাকবেন না। যেসব জনবিরোধী আইন নিয়ে এসেছে সেসব বদল করা হবে। এখানে আন্দোলন করে লাভ নেই। আমি আছি। দিল্লিতে গিয়ে করুন। আমাদের সাংসদরা পাশে থাকবেন। ইন্ডিয়া টিম পাশে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি, আপনার সরকারের অধীনে এমন কাজ করতে দেবেন না।’