‘কড়া পরিচালকটা রেপুটেশন হিসেবে ব্যবহার করি, প্যাকআপ হয়ে গেলেই…’

Spread the love

টলিউডের অন্যতম ব্যস্ত পরিচালক তিনি। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে একাধিক জাতীয় পুরস্কার। বাংলা ইন্ড্রাস্ট্রির চোখে তিনি ‘ফার্স্ট বয়’। যদিও খেতাব নিয়ে কখনওই সেভাবে মাথা ঘামান না সৃজিত। তাঁর কাজই তাঁর হয়ে কথা বলে। পরিচালকের সে রকমই একটা কাজ ছিল ‘হেমলক সোসাইটি’। কোয়েল মল্লিক ও পরমব্রত চট্টপাধ্যায় অভিনীত এই ছবি সেই সময় দর্শক থেকে সমালোচক সকলের কাছেই দারুণ ভাবে সমাদৃত হয়েছিল। আর এবার নববর্ষের আবহে বড় পর্দায় মুক্তি পেতে চলেছে এই ছবির সিক্যুয়াল ‘কিলবিল সোসাইটি’। কিন্তু এত বছর পর কেন ছবির সিক্যুয়াল আনার কথা ভাবলেন সৃজিত? সবটা নিয়ে হিন্দুস্থান টাইমস বাংলার সঙ্গে খোলামেলা আড্ডায় ধরা দিলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়।

বর্তমানে এমন অনেক ছবি আসে যেগুলো সমালোচক ও দর্শকের কাছে খুব প্রশংসা পায় ঠিকই, কিন্তু ছবিটা যত সংখ্যক দর্শকের কাছে পৌঁছে যাওয়া উচিত ছিল, সেটা হয়তো পৌঁছতে পারে না। সেখানে কোনও ছবির সিক্যুয়াল বা প্রিক্যুয়াল দর্শককে হলমুখী করতে বাড়তি সুবিধা দেয়। সেই জায়গা থেকেই কি পরিচালক তাঁর ছবির সিক্যুয়াল আনার কথা ভাবলেন? প্রশ্নে সৃজিত জানান, শুরু থেকেই ‘হেমলক সোসাইটি’ এবং ‘ভিঞ্চি দা’ এই দুটি ছবির সিক্যুয়াল আনার পরিকল্পনা তাঁর ছিল। এই প্রসঙ্গে সৃজিত বলেন, ‘হেমলোক সোসাইটির সিক্যুয়াল আনার পরিকল্পনা শুরু থেকেই ছিল। ছবিটার শেষ দৃশ্যে সাহেবকে (সাহেব চট্টোপাধ্যায়) পরমব্রত (পরমব্রত চট্টপাধ্যায়) বাঁচিয়ে যখন হেমলক সোসাইটিতে ভর্তি করার জন্য নিয়ে যাচ্ছে, সেটার মধ্যে দিয়েই একটা নতুন কিছু শুরুর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল।’

তিনি জানান, তাঁর অন্যান্য যে সব ছবির সিক্যুয়াল বা প্রিক্যুয়াল এসেছে সেগুলো নিয়ে বরং তিনি আগে থেকে ভেবে রাখেননি। তবে সে ছবিগুলির ক্ষেত্রে কি বাণিজ্যিক দিককে মাথায় রেখেই এগিয়ে ছিলেন তিনি? প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলে পরিচালকের সাফ জবাব, বাণিজ্যিক দিকের কথা মাথায় রেখে কখনও তিনি কোনও ছবি নিয়ে অগ্রসর হন না। তাঁর কথায়, ‘কোনও ছবির সিক্যুয়াল বা প্রিক্যুয়াল নিয়ে দর্শকদের মধ্যে অবশ্যই উন্মাদনা একটু বেশি থাকে। দর্শকদের চরিত্রগুলোর জীবন নিয়ে একটা আগ্রহ থাকে। ফলে সেটার একটা সুবিধা তো অবশ্যই আছে। ‘দ্বিতীয় পুরুষ’, ‘দশম অবতার’-এর ব্লকবাস্টার হওয়াও এর প্রমাণ দেয়। এটা নিয়ে সত্যিই কোনও দ্বিমত নেই। তবে আমি কখনওই বাণিজ্যিক দিকের কথা মাথায় রেখে এগিয়ে যাই না। মার্কেটে কি চলছে? এইসব আমাকে কোনও দিনই ভাবায় না। আমি যে কাজগুলো করতে ভালোবাসি, সেগুলোর প্রতি আমার বেশি আগ্রহ। আমি আনন্দ করের সঙ্গে আলাপচারিতা করে দেখতে চেয়েছিলাম তার জীবনে কি হচ্ছে। আর আমার সেই আগ্রহের সঙ্গে প্রযোজক ব্যবসায়িক দিকটা মিলিয়ে দেখেন। প্রযোজকের উত্তেজনা, আগ্রহ সেটা কিন্তু আসে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফিল্মের ব্যবসায়িক সুবিধার জায়গা থেকে।’

কিন্তু ‘হেমলক সোসাইটি’-এর সিক্যুয়াল আনতে এত বছর কেন সময় লাগল? প্রশ্নে সৃজিত বলেন, ‘আমি সঠিক গল্প পাইনি, তাই এত বছর সময় লেগে গেল।’ তবে এবার এক সত্যি ঘটনাই সৃজিতের ‘হেমলক সোসাইটি’র সিক্যুয়াল ‘কিলবিল সোসাইটি’ আনার সিদ্ধান্তকে ত্বরান্বিত করেছে। সৃজিতের জানান, তাঁর ছবির এই বিষয়বস্তু তিনি খুঁজে পেয়েছেন হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলির জীবন থেকে। অ্যাঞ্জেলিনার বয়স তখন ২২, সেই সময় আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অভিনেত্রী। কিন্তু নিজে তা করতে পারছিলেন না। তাই এক বন্দুকবাজকে ভাড়া করেছিলেন তাঁকে গুলি করার জন্য। তবে অভিনেত্রী যে সেই সময় খানিক বিভ্রান্ত হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা বুঝেছিলেন ওই বন্দুকবাজ। তাই তিনি অ্যাঞ্জেলিনাকে একমাস সময় দিয়ে জানিয়েছিলেন, একমাস পরও যদি অ্যাঞ্জেলিনার সিদ্ধান্তের পরিবর্তন না হয়, তবে তিনি এই কাজ করবেন। যদিও একমাস পরে মন বদলায় অভিনেত্রীর। পরে এক সাক্ষাৎকারে এই কথা নিজেই জানিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেলিনা। সেখান থেকেই সৃজিত তাঁর ‘কিলবিল সোসাইটি’র বিষয়বস্তু পেয়েছেন। ইতিমধ্যেই ছবির ট্রেলার প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে কৌশানী মুখোপাধ্যায়ের চরিত্রকেও নিজের মৃত্যুর সুপারি দিতে দেখা গিয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয় কর’কে। ‘হেমলক সোসাইটি’র ‘আনন্দ কর’ই ‘কিলবিল সোসাইটি’র ‘মৃত্যুঞ্জয়’।

কিন্তু যাঁর অভিনীত চরিত্র ‘মৃত্যুঞ্জয়’ নিয়ে এত আলোচনা সেই পরমব্রতর সঙ্গে জুটি বেঁধে একাধিক ভালো ভালো কাজ দর্শকদের উপহার দিয়েছেন সৃজিত। তবে এত বছর পর ফের সেই চেনা চরিত্রকে নতুন মোড়কে আবিষ্কার করতে গিয়ে পরিচালকে কতটা অবাক করলেন পরম? প্রশ্নে সৃজিতের উত্তর, ‘পরম ‘আনন্দ কর’কে এমন ভাবেই নিজের মধ্যে আত্মস্থ করে নিয়েছেন, যদি মাঝরাতে ঘুম থেকে তুলে ওঁকে বলি আনন্দ কর হতে, তাহলে ও স্বাচ্ছ্বন্দ্যে তা করে ফেলবে। তবে এই ছবিতে আমাকে চমক দিয়েছে কৌশনী। ও কমার্শিয়াল ছবির অভিনেতা, তাই শুরুর দিকে ভেবেছিলাম ওঁকে হয়তো অনেক পরিশ্রম করতে হবে, অভিনয়ের ধারা পাল্টানোর জায়গা থেকে। কিন্তু কৌশানী এত বুদ্ধিমতী যে সেটার ৩০ শতাংশও করতে হয়নি ওঁকে। যা যা বলেছি পুরোটা আত্মস্থ করে, যা যা চেয়েছি তা দিতে পেরেছে। মনস্তাত্ত্বিক যে জায়গাগুলো চেয়েছিলাম ওঁর কাজের মধ্যে দিয়ে সেই জায়গাগুলোয় আমাকে ও অবাক করেছে। খুব খুব খুশি ওঁর কাজ নিয়ে।’

তবে অন্য ধারার অভিনয়ে কৌশানী মুখোপাধ্যায় তাঁর শেষ কয়েকটি কাজের মাধ্যমেই হাত পাকিয়েছেন। সৃজিত জানান, কৌশানিকে বেছে নেওয়ার নেপথ্যেও রয়েছে তাঁর সেই সব কাজ। সৃজিতের কথায়, ‘আবার প্রলয় এবং বহুরূপীতে আমি ওঁর মধ্যে একটা স্ফুলিঙ্গ দেখেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল পরিশ্রম করলে সেই স্ফুলিঙ্গ দাবানল হয়ে যেতে পারে। ওঁর কাজ দেখে আমি চমকে গিয়েছি, পরমও চমকে গিয়েছে। এমনকী দুটো দৃশ্যে কৌশানী এত ভালো কাজ করেছে যে, গোটা ইউনিট স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে হাততালি দিয়েছিল ও শর্ট দেওয়ার পর। অবশ্যই এটা অনেক বড় একটা ব্যাপার।’ তবে ‘কিলবিল সোসাইটি’-এর প্রিক্যুয়ালে কোয়েল মল্লিকের কাজও দর্শকদের বেশ ভালো লেগেছিল। কিন্তু সদ্যই দ্বিতীয়বারের জন্য মা হয়েছেন নায়িকা, তাই কি ছবি থেকে সরে থাকলেন তিনি? প্রশ্নে সৃজিত জানান, এই ছবির গল্প সম্পূর্ণ আলাদা, এই ছবির জন্য কোয়েলকে ভাবা হয়নি। তবে সব মিলিয়ে ‘কিলবিল সোসাইটি’ নিয়ে দারুণ ভাবে আশাবাদী পরিচালক।

কিন্তু কেবল ‘কিলবিল সোসাইটি’ নয়, মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ‘পদাতিক’ থেকে ‘টেক্কা’, বছর শুরুতে ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’-এর মতো একাধিক ভালো ভালো ছবি পরিচালক উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে একের পর এক অভিনব সব কাজ কীভাবে হাজির করা সম্ভব? প্রশ্নে পরিচালক বলেন, ‘নিজের বক্তব্য বা নিজের গল্পের উপর আত্মবিশ্বাসী হলে, সঙ্গে একটা ভালো টিম থাকলে, আর একটু কম ঘুমিয়ে দিনে ১৮ থেকে ২০ ঘন্টা কাজ করতেই পারলেই এটা সম্ভব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *