ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে মতানৈক্য বা বিবাদ চলে আসছে, এবারও তার কোনও সুরাহা হল না। মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিদল ভারত সফরে এসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও তাদের তরফে তিস্তা জলবণ্টন নিয়ে আলোচনা করার কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি বলেই দাবি সূত্রের।
উল্লেখ্য, ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাঠানো হয়। সেই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশের নদী কমিশন (জেআরসি)-এর সদস্য মুহাম্মদ আবুল হোসেন। মনে করা হয়েছিল, এই প্রতিনিধিদল হয়তো তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবে এবং দীর্ঘদিনের বিবাদে ইতি টানার একটা চেষ্টা অন্তত করবে।
বিশেষত, সম্প্রতি তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশে আন্দোলন শুরু হয়। একটানা ৪৮ ঘণ্টার বিশেষ কর্মসূচি পালন করে বেগম খালেদা জিয়ার দল বিএনপি। উল্লেখ্য, হাসিনার আমলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বরাবরই মধুর থাকলেও তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি সংক্রান্ত সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে এবারের ত্রিপাক্ষিক আলোচনায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ দফতরের সচিব-সহ অন্যরা। এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকেও বিশেষ প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছিল।
এবারের এই সফরের একেবারে শুরুতেই ফারাক্কা ব্য়ারেজ ঘুরে দেখেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। তারপর কলকাতায় পৌঁছে গত ৬ এবং ৭ মার্চ ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে যোগ দেন তাঁরা। সেই বৈঠকে বাকি দুই পক্ষের উপস্থিতিতে মহানন্দার বাঁধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাংলাদেশি প্রতিনিধিরা।
তাঁদের অভিযোগ ছিল, মহানন্দায় বাঁধ দেওয়ার ফলে বাংলাদেশের একাধিক নদীতে জলস্তর কমে যাচ্ছে। যার ফলে নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। যার উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের তরফে অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
অন্যদিকে, দু’দিনের এই বৈঠকে জলবণ্টন সংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও দূষণ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে দাবি সূত্রের। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের বেশ কিছু নদীর পাশেই চিনিকল রয়েছে।
এই চিনিকলগুলি থেকে ব্যাপক দূষণ ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। যার ফলে এ রাজ্যেরও সীমান্ত লাগোয়া কিছু এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে। সূত্রের দাবি, এই ঘটনা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে আসা প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।