নিজের দেশকে কাঠগড়ায় তুললেন প্রাক্তন পাক বিদেশমন্ত্রী?

Spread the love

কার্যত নিজের দেশের বিরুদ্ধেই বিস্ফোরক দাবি করলেন প্রাক্তন পাকিস্তানি বিদেশমন্ত্রী খুরশিদ মাহমুদ কাসুরি। তাঁর বক্তব্য, কোনও যুদ্ধ না হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে ভারত-পাক সম্পর্ক ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাঁর কথায়, ভারত বারংবার পাকিস্তানকে কাছে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। গত ২০ মার্চ লাহোরে ইনস্টিটিউট অফ পিস অ্যান্ড কানেক্টিভিটি আয়োজিত ‘পাকিস্তান-ভারত সম্পর্ক: বর্তমান অবস্থা ও উন্নতির উপায়’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে কাসুরি বলেন, দুই দেশের অমীমাংসিত ইস্যুগুলো সমাধানের একমাত্র উপায় হল আলোচনা। তিনি আশা ব্যক্ত করেন, ভবিষ্যতে ভারত-পাক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।

বর্তমান সময়কে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ইতিহাসে অন্যতম খারাপ সময় হিসাবে বর্ণনা করে কাসুরি বলেন, কার্গিল যুদ্ধের পরেও নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদ শীঘ্রই শান্তি প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার জন্য আলোচনার টেবিলে এসেছিল। ইনস্টিটিউট অফ পিস অ্যান্ড কানেক্টিভিটির চেয়ারম্যান কাসুরি বলেন, দুই দেশ যদি শান্তিপূর্ণভাবে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ হাতছাড়া করে তবে তা দুঃখজনক হবে কারণ কাশ্মীর সমস্যার সম্ভাব্য সমাধানের জন্য তাদের ইতিমধ্যে চার দফা ফর্মুলা আকারে একটি সম্মত রোডম্যাপ রয়েছে।

২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত পাক বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন কাসুরি। তিনি আদতে প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের সঙ্গে ভারতীয় নেতৃত্বের বৈঠকে উঠে আসা ‘সমাধানের’ কথা উল্লেখ করছিলেন। কাসুরি উল্লেখ করেছিলেন যে তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের সাথে শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করেছিলেন। এই আবহে তাঁর বক্তব্য, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, বর্তমান হতাশাজনক পরিস্থিতি সত্ত্বেও ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি চায়।’১৯৯৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে কার্গিল সেক্টরে ভারতের জমি দখল করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ভারতীয় সেনারা প্রায় দুই মাসের লড়াইয়ে তাদের হারিয়ে দেয়। এই কার্গিল যুদ্ধের পর ভারত আভিজাত্য ও উদারতা প্রদর্শন করে এবং পারভেজ মোশাররফ ও তাঁর দলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিল এবং সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনার টেবিলে বসেছিল।

এই আবহে কাসুরি বলেন, চ্যালেঞ্জ ও বর্তমান সংঘাত সত্ত্বেও তার অভিজ্ঞতা তাঁকে শিখিয়েছে যে, পাকিস্তান-ভারত সম্পর্কে হঠাৎ ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। কার্গিল যুদ্ধের মাস্টারমাইন্ড মুশারফকে পরে কীভাবে নয়াদিল্লিতে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল, সে কথাও স্মরণ করান তিনি। একইভাবে ২০১৫ সালে লাহোরে তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু পাকিস্তানের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সাড়া পায়নি ভারত। তাঁর কথায়, পাকিস্তান বারবার যুদ্ধ করলেও ভারত তাদের কাছে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট ছিল যে প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০২১ সালের এপ্রিলে পাকিস্তান সফরে যাবেন। হিংলাজ মাতা মন্দির পরিদর্শন করতে এবং পরে শান্তি প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে ইসলামাবাদ যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সেটিও সম্ভব হয়নি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *