বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন কবে হবে? এই প্রশ্ন একটিমাত্র বাক্যের হলেও এর সোজাসাপটা একবাক্যের কোনও জবাব এখনও পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। বস্তুত, এই প্রসঙ্গে যখনই প্রশ্ন উঠছে, ‘নানা মুনির নানা মত’ শোনা যাচ্ছে। কিন্তু, মূল প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই।
এ নিয়ে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘কালের কণ্ঠ’ একাধিক বিস্তারিত ও বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। যা থেকে কয়েকটা বিষয় বেশ স্পষ্ট। প্রথমত – মহম্মদ ইউনুসের কেয়ারটেকার সরকার মুখে যাই বলুক, আদতে তারা নির্বাচন পিছিয়ে দিতেই বেশি আগ্রহী।
দ্বিতীয়ত, মহম্মদ ইউনুস প্রশাসন যেটা চাইছে, সরকার থেকে বেরিয়ে গিয়ে সেই তত্ত্বকেই আরও জোরদার করার চেষ্টা করছেন, বাংলাদেশের নতুন দল – জাতীয় নাগরিক পার্টি (সংক্ষেপে এনসিপি)-এর আহ্বায়ক তথা মহম্মদ ইউনুসের প্রিয় পাত্র নাহিদ ইসলাম।
তৃতীয়ত – বিএনপি চাইছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন আগে করতে। আর, জামায়েত চাইছে আঞ্চলিক নির্বাচন আগে করতে।
চতুর্থত – নির্বাচন কমিশনের কাছে এখনও পর্যন্ত কোনও ধরনের নির্বাচন করানো নিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও নির্দেশ আসেনি। তবু তারা ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কাজ শুরু করে দিয়েছে।
সব মিলিয়ে একটা চরম জগাখিচুড়ি অবস্থা হয়ে রয়েছে!
নির্বাচন নিয়ে বিএপি-র বক্তব্য:
বিএনপি-র বক্তব্য, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনা করতে হলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে স্থায়ী সরকার গঠন করা সবথেকে জরুরি। সেই সরকার গঠিত হলে, পরবর্তীতে তারাই প্রয়োজনীয় সমস্ত সংস্কার করতে পারবে। সেসব নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের না ভাবলেও চলবে।
আর, এক্ষেত্রে বিএনপি চাইছে, জাতীয় বা কেন্দ্রীয় নির্বাচন আগে করতে। কারণ, আঞ্চলিক নির্বাচন আগে করা হলে সামগ্রিকভাবে দেশের সমস্ত নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করতে বছরের পর বছর সময় পার হয়ে যাবে।
জামায়েতের বক্তব্য:
তারা চায় পুর এলাকা, গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে সমস্ত আঞ্চলিক নির্বাচন আগে সেরে ফেলা হোক। তাদের যুক্তি, বর্তমানে আঞ্চলিকস্তরে কোথাও নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় আমজনতা তাদের প্রাপ্য পরিষেবাগুলি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেটার সমাধান আগে হওয়া দরকার।
এবং জামায়েত মনে করে আগেই যদি কেন্দ্রীয় নির্বাচন হয়ে যায়, তাহলে নবগঠিত সরকারে যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকবে, তারা আঞ্চলিক নির্বাচনে প্রভাব খাটাবে এবং তার ফলে পক্ষপাতদুষ্ট আঞ্চলিক প্রশাসন তৈরি হবে।
তবে, জামায়েতেরও বক্তব্য হল, যেটুকু সংস্কার না করলেই নয়, সেটুকু সেরেই দ্রুত নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা হোক।
মহম্মদ ইউনুসের কেয়ারটেকার সরকার যা বলছে:
ইউনুস বলছেন, সংস্কার না করে নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব নয়। যদিও তিনি আশাবাদী, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই কেন্দ্রীয় নির্বাচন শুরু করা হতে পারে। তবে, তা আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত বিলম্বিতও হতে পারে।
এনসিপি প্রধান প্রধান নাহিদ ইসলামের বক্তব্য:
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইতিমধ্যেই নাহিদ জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের আইন-শৃঙ্খলার যা বেহাল দশা, তাতে চলতি বছর আদৌ নির্বাচন হওয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন না।
তাছাড়া, নাহিদ চান – ইউনুস প্রশাসন আগে সব সংস্কার সাধন করবে, তারপর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ঐক্যমতে আসবে, তারপর নির্বাচন শুরু করা হবে। এবং নাহিদ ইসলামরাও আগে আঞ্চলিক নির্বাচন করানোর পক্ষেই রয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন যা বলছে:
তারা জানিয়েছে, যদি সত্যিই আঞ্চলিক নির্বাচন আগে করানো হয়, তাহলে জাতীয় বা কেন্দ্রীয় নির্বাচন কবে হবে, সেটা বলা সম্ভব নয়। কারণ, বাংলাদেশের নির্বাচনী বন্দোবস্ত অনুসারে, অসংখ্য দফায় ও ধাপে ধাপে আঞ্চলিক নির্বাচন করাতে হয়। যা পুরোটা শেষ করতে অন্তত বছর খানেক লাগবে!
এবার যদি আগামী ডিসেম্বর থেকে আঞ্চলিক নির্বাচন করাতে হয়, তাহলে তার প্রক্রিয়া এখনই শুরু করতে হবে। কিন্তু, ঘটনা হল, তেমন কিছু ঘটেনি। আর যদি সত্যিই ডিসেম্বর থেকে আঞ্চলিক নির্বাচন শুরু হয়, তাহলে তা শেষ করতেই তো পরের বছরের (২০২৬) ডিসেম্বর মাস এসে যাবে! তাহলে কেন্দ্রীয় বা জাতীয় নির্বাচন কবে হবে? তাহলে কি তত দিন পর্যন্ত কেয়ারটেকার সরকারই দেশ চালাবে? আর, তার মাথায় বসে থাকবেন মহম্মদ ইউনুস?