অস্ট্রেলিয়া হারল, বুক ফাটল পাকিস্তানের। কারণ সেমিফাইনালে ভারত জিতে যাওয়ায় আয়োজক হয়েও পাকিস্তান আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল পাচ্ছে না। ফাইনাল হবে দুবাইয়ে। তবে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল হবে পাকিস্তানের লাহোরের গদ্দাফি স্টেডিয়ামে। বুধবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে নামবে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই ম্যাচে যে দল জিতবে, সেই দল দুবাইয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনালে খেলবে। যে ম্যাচটা আগামী ৯ মার্চ (রবিবার) হবে। তার আগে আজ যেভাবে ভারত খেলল, তাতে স্বস্তি পাবেন রোহিত শর্মারা।
স্মিথ ও ম্যাক্সওয়েলের পরপর উইকেটে ম্যাচ ঘুরে যায়
মঙ্গলবার টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ২৬৪ রানে অল-আউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। একটা সময় মনে হয়েছিল যে অজিরা অনায়াসে ৩০০ রানের গণ্ডি পেরিয়ে যাবেন। বিশেষত আগের তিনটি ম্যাচের নিরিখে মঙ্গলবার দুবাইয়ের যে পিচে খেলা হচ্ছে, সেটা তুলনামূলকভাবে ব্যাটিংয়ের পক্ষে ভালো হওয়ায় একটা সময় ভারতীয়দের মধ্যে প্রবলভাবে সেই আশঙ্কা চেপে বসেছিল।
কিন্তু পাঁচ বলের মধ্যে স্টিভ স্মিথ এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (৩৬.৪ ওভার এবং ৩৭.৩ ওভার) আউট হয়ে যাওয়ায় জোরদার ধাক্কা খায় অস্ট্রেলিয়া। আর সেই কারণেই স্মিথের ৭৩ রান এবং অ্যালেক্স ক্যারির ৬১ রানের পরেও কোনওক্রমে ২৬০ রানের গণ্ডি পার করেন অজিরা।
শ্রেয়সের সঙ্গে ‘ক্লাসিক’ জুটি বিরাটের
আর ভারতের জন্য সবথেকে ভালো ব্যাপার হয় যে অজিদের কোনও জুটিই বড় রান করতে পারেনি। তিনটি অর্ধশতরানের জুটির পরেও সর্বোচ্চ ৫৬ রানের পার্টনারশিপ গড়েন অজিরা। যখনই মনে হচ্ছিল যে ম্যাচটা ভারতের হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, তখন উইকেট তুলে নিচ্ছিল ভারত।
আর সেটার সুবাদে রোহিত শর্মা এবং শুভমন গিল ব্যাট করতে নামেন, তখন লক্ষ্যমাত্রাটা ২৬৫ রান ছিল। একেবারে সহজ না হলেও সেটা ভয়ংকর কঠিন ছিল না। নাগালের বাইরে ছিল না লক্ষ্যমাত্রাটা। তবে শুরুটা খুব একটা ভালো করতে পারেনি ভারত। ৩০ রানে প্রথম উইকেট হারায়। দ্বিতীয় উইকেট পড়ে ৪৩ রানে। তারপর তৃতীয় উইকেটে ৯১ রান যোগ করেন বিরাট এবং শ্রেয়স আইয়ার। ১১১ বলের সেই জুটিটা একেবারে ‘ক্লাসিক’ একদিনের ইনিংস ছিল।
শ্রেয়স ৬২ বলে ৪৫ রান করে আউট হয়ে যাওয়ার অক্ষর প্যাটেলের সঙ্গে জুটি গড়ে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন বিরাট। তাঁদের জুটিতে ৪৪ রান ওঠে। তারপর ২৭ রান করে অক্ষর আউট হয়ে যাওয়ার পরে বিরাটের সঙ্গে জুটিতে ভারতকে জয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে আসতে থাকেন কেএল রাহুল। তিনি প্রাথমিকভাবে ঢিমেগতিতে খেলছিলেন। পরবর্তীতে আগ্রাসী খেলে বিরাটের উপরে চাপ কমাতে থাকেন ভারতীয় উইকেটকিপার।
অ-বিরাট সুলভ শট খেলে আউট হয়ে যান কোহলি!
সেইসময় মনে হচ্ছিল, যে রানটা বাকি আছে, সেটা সেরকমভাবেই তুলে নেবে ভারত। বিরাট ধরে খেলবেন। আর রাহুল আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে চাপটা চেপে বসতে দেবেন না। সেই কাজটাই করছিলেন রাহুল। এগিয়ে এসে চার এবং ছক্কাও মারেন। কিন্তু ৪২.৪ ওভারে একেবারে অ-বিরাট সুলভ শট খেলে আউট হয়ে যান কোহলি। ওই ওভারের একটা ছক্কা মেরে দিয়েছিলেন রাহুল। তারপরও বড় শট মারতে গিয়ে ৮৪ রানে আউট হয়ে যান বিরাট।
কোহলি যখন আউট হন, তখন জয়ের জন্য ৪৪ বলে ৪০ রান দরকার ছিল। রানটা তেমন বেশি না হলেও হার্দিক পান্ডিয়ার চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য ভারতের উপরে চাপ বাড়ছিল। তিনি যেন সাতটি ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। আর সেটা করতে গিয়ে একের পর এক ডট বল খেলে যাচ্ছিলেন। বড় শট মারছিলেন। কিন্তু অহেতুক ডট বল খেলে চাপ বাড়াচ্ছিলেন। শেষপর্যন্ত ‘হিরো’ হতে গিয়ে আউট হয়ে যান। তবে ভারতের কোনও বিপদ হয়নি। ১১ বল বাকি থাকতেই চার উইকেটে জিতে পঞ্চমবারের জন্য আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পৌঁছে যায় ভারত। ৩৪ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন রাহুল।