৭২’র জন্মদিনেও চিরসবুজ সুব্রত

Spread the love

কলকাতা ময়দান, বাংলার ফুটবল আর বাবলু ভট্টাচার্য- যেন একই সুতোর মালা। সারা জীবন ফুটবলকে আঁকড়েই তাঁর যাবতীয় সাধনা। সফল ফুটবলার থেকে সফল কোচ- সুব্রতকে কিন্তু লড়াই করতে হয়েছে বিস্তর। শ্যামনগর থেকে জার্নিটা শুরু করেছিলেন সুব্রত, সেখান থেকে ভারতের অন্যতম সেরা ফুটবলার হয়ে ওঠা। কলকাতা ময়দান থেকে ভারতীয় ফুটবল, তিনি এখন সকলের প্রিয় ‘বাবলুদা’।

ফুটবলার জীবনে টানা ১৭ বছর খেলেছেন সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে। কখনও ক্লাব বদল করেননি তিনি। তাই আজও মোহনবাগানের ঘরের ছেলে হয়ে রয়ে গিয়েছেন বাবলু ভট্টাচার্য। ১৯৭৭-এ তিনি মোহনবাগানের অধিনায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই বছরই কিংবদন্তি পেলের দল কসমস যখন কলকাতায় খেলতে আসে, তখন তাঁর নেতৃত্বেই ২-২ ড্র করে মোহনবাগান। এবং অধিনায়কত্ব পেয়ে দলকে ভারতীয় ফুটবলের ত্রিমুকুট (ডুরান্ড কাপ, রোভার্স কাপ ও আইএফএ শিল্ড) জিততে সাহায্য করেছিলেন তিনি। মোহনবাগানের হয়ে প্রায় সাড়ে আটশো ম্যাচ খেলেছেন সুব্রত। যার মধ্যে প্রায় ৫০টি ডার্বিও ছিল।

ডিফেন্ডার হলেও মোহনবাগানের জার্সি গায়ে ৪১টি গোল করেছেন তিনি। আশির দশকে তিনি যখন ফর্মের তুঙ্গে, তখন নাইজেরিয়া থেকে এক নতুন তারকার আগমন ঘটে কলকাতার ফুটবলে, যাঁর নাম চিমা ওকোরি। চিমা তখন ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণে সেরা অস্ত্র। সেই সময়ে ডার্বি মানেই মোহনবাগানের গোল এরিয়ায় চিমা ও সুব্রতর ধুন্ধুমার ফুটবল-ডুয়াল। যা নিয়ে তখন ফুটবলপ্রেমীদের উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। ১৯৯১-এ কিংবদন্তি ফুটবলার ও কোচ ববি রবসন যখন পিএসভি আইন্দহোভেনের দল নিয়ে আসেন কলকাতায়, সেই ম্যাচেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন সুব্রত।

শুধু কী ফুটবলার, কোচ হিসেবেও তাঁর সাফল্য অগণিত। বাগানের হয়ে শুধু খেললেও, সুব্রত কিন্তু কলকাতার তিন প্রধানেই- ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান এবং মহমেডান স্পোর্টিং কোচিং করিয়েছেন। কোচ হিসেবে ২টি জাতীয় লিগ, ফেডারেশন কাপ রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। এছাড়াও একাধিক ক্লাবে সাফল্যের সঙ্গে কোচিং করিয়েছেন বাবলু ভট্টাচার্য। এখন অবশ্য পেশাদারী ফুটবল থেকে দূরেই থাকেন। তবে যাঁর শয়নে, স্বপনে, জাগরণে ফুটবল, তিনি কী একেবারে ফুটবল মাঠ থেকে দূরে সরে থাকতে পারবেন! তাই তো সকলের অগোচরে গড়ে তুলছেন কিশোর ফুটবলারদের, আগামী দিনে যারা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বাংলা ফুটবলের ব্যাটন। আসলে শ্যামনগরের সাহেব বাগান যুবকবৃন্দের মাঠে রয়েছে ‘সুব্রত ভট্টাচার্য ফুটবল অ্যাকাডেমি।’ প্রত্যেক সপ্তাহে শ্যামনগরে গিয়ে নিজের অ্যাকাডেমিতে ফুটবলের পাঠ দিচ্ছেন কিশোরদের। বয়স ৭০ পেরিয়েছে বহুদিন। ৩ মার্চ ৭২ বছর হয়ে গেল তাঁর। কিন্তু ফুটবলকে নিয়ে পাগলামি একই রকম রয়ে গিয়েছে। সুব্রতকে জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা। এমন ফুটবল উন্মাদনা নিয়েই তাঁর আগামী জন্মদিনগুলোও চির সবুজ হয়ে থাকুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *