রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যেই রাজ্যপালকে সাংবিধানিক দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, রাজ্যপালকে সচেতন থাকতে হবে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জনগণের ইচ্ছাকে দমানোর জন্য রাজ্য আইনসভার ক্ষেত্রে যেন কোনও বাধা সৃষ্টি (রোড ব্লক) না করেন না শ্বাসরোধ না করেন। সেইসঙ্গে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, সাংবিধানিক পদে যাঁরা বসে আছেন, তাঁদের সংবিধানের মূল্যবোধ মেনে কাজ করতে হবে। বছরের পর বছর ধরে পূর্বপুরুষদের যে লড়াই করতে হয়েছে, সেটার ফসল হিসেবে এইসব মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যখন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসবে, তখন তাঁদের রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে সংবিধানে বিধিবদ্ধ মূল্যবোধ অনুযায়ী কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।
অবৈধ কাজ করেছেন রাজ্যপাল, স্পষ্ট কথা সুপ্রিম কোর্টের
আর সুপ্রিম কোর্ট যে মন্তব্য করেছে, সেটা তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আরএন রবি এবং রাজ্য সরকারের মামলা নিয়ে। মঙ্গলবার তাঁকে শীর্ষ আদালতের রীতিমতো অসন্তোষের মুখেও পড়তে হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জেবি পাদ্রিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিলে সায় না দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল এবং রাজ্যের আইনসভায় পুনরায় পাশ হয়ে যাওয়ার পরেও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য যে রেখে দিয়েছিলেন, সেই কাজটা ‘অবৈধ এবং ভুল’।
সংবিধানের ২০০ ধারার উল্লেখ সুপ্রিম কোর্টের
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, সংবিধানের ২০০ ধারায় (বিলে অনুমোদন প্রদান সংক্রান্ত বিষয় ব্যাখ্যা করা হয়েছে) যা বলা হয়েছে, তাতে রাজ্যপালকে বাধ্যতামূলকভাবে মন্ত্রিপরিষদের সাহায্য এবং পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হবে। সংবিধানে বিধিবদ্ধ তিনটি বিষয়ের মধ্যে যে কোনও একটি বিকল্প বেছে নিতে হয় তাঁকে – বিলে অনুমোদন দেওয়া, অনুমোদন না দেওয়া এবং রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু দ্বিতীয়বার যখন রাজ্যপালের কাছে বিল পেশ করা হচ্ছে, তখন সেটাকে রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য রেখে দেওয়ার সুযোগ নেই তাঁর কাছে।
সম্পূর্ণ ভেটো বা পকেট ভেটোর ধারণা নেই, বলল সুপ্রিম কোর্ট
বিষয়টি আরও ব্যাখ্যা করে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ভারতীয় সংবিধানে সম্পূর্ণ ভেটো বা পকেট ভেটোর কোনও ধারণা নেই। বিলের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের সামনে তিনটি বিকল্প থাকে। কোনও বিল ফের বিধানসভায় পাশ করানোর পরে যদি রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়, তাহলে সেটা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য রেখে দেওয়ার সুযোগ নেই। একমাত্র সেটা হেরফের হতে পারে, যদি প্রথমবার যে বিল পাশ করানো হয়েছিল, সেটার থেকে আলাদা হয় দ্বিতীল বিল।
বাধা নয়, অনুঘটক হতে হবে রাজ্যপালকে, বলল সুপ্রিম কোর্ট
সেই রেশ ধরেই রাজ্যপালকে নিজের দায়িত্ব মনে করিয়ে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, রাজ্যপালকে খাটো করা হচ্ছে না। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রের নির্ধারিত নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে রাজ্যপালকে। আইনসভা এবং রাজ্য সরকারের মাধ্যমে মানুষের যে ইচ্ছা প্রকাশ পায়, সেটার সম্মান করতে হবে। নিষ্ঠার সঙ্গে বন্ধু, দার্শনিক এবং পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করতে হবে রাজ্যপালকে। সংঘাতের সময় ঐক্যমত ও সমাধানের অগ্রদূত হতে হবে। বাধা নয়, অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে হবে রাজ্যপালকে। রাজ্য সরকারের সঙ্গও ঐক্য বজায় রেখে কাজ করতে হবে।