কাউকে ‘মিঁয়া-টিঁয়া’ বা ‘পাকিস্তানি’ বললেই সেটা ফৌজদারি অপরাধ হয়ে যায় না। এমনই মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট। ৮০ বছরের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ফৌজদারি মামলা খারিজ করে দিয়ে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি বিভি নাগরত্না এবং বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘মিঁয়া-টিঁয়া’ এবং ‘পাকিস্তানি’ হিসেবে অভিহিত করে ওই বৃদ্ধ অপর একজনের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি যে মন্তব্য করেছেন, সেটা নিঃসন্দেহে রুচিহীন। কিন্তু সেটা মোটেও অপর ব্যক্তির ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের পর্যায়ে পৌঁছে যায় না। আর যেহেতু ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের প্রশ্নই উঠছে না, তাই সেটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করেনি সুপ্রিম কোর্ট।
ঝাড়খণ্ড থেকে সেই মামলার সূত্রপাত
আর যে মামলার প্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালত সেই মন্তব্য করেছে, সেটার সূচনা হয়েছিল ঝাড়খণ্ডের বোকারোয়। ৮০ বছরের হরিনন্দন সিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন মহম্মদ শামিম-উদ্দিন নামে এক উর্দু অনুবাদক এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্লার্ক (তথ্য জানার অধিকার ক্ষেত্র)। তিনি অভিযোগ করেন, ওই বৃদ্ধ ধর্মীয় বিষয় টেনে কটূক্তি করেছেন। যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃদ্ধের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছিল।
নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টে রেহাই পাননি বৃদ্ধ
পরবর্তীতে সেই মামলায় পুলিশ চার্জশিট দাখিল করলে ওই বৃদ্ধকে তলব করেছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। তারইমধ্যে সেই অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি চেয়ে আবেদন করেন বৃদ্ধ। তাতে পুরোপুরি সুরাহা পাননি। ইচ্ছাকৃতভাবে কারও ভাবাবেগে আঘাতের ধারা বাদ দেওয়া হলেও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত, ফৌজদারি ভীতিপ্রদর্শনের ধারাগুলো বহাল রাখা হয়েছিল। সেই পরিস্থিতিতে ধাপে-ধাপে নিম্ন আদালত, ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন বৃদ্ধ। শেষে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
কেন বৃদ্ধের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা খারিজ? ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্টের
সেই মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তাতে ২০১০ সালে সজ্জন কুমার বনাম সিবিআই মামলায় শীর্ষ আদালতের সিদ্ধান্তকে তুলে ধরা হয়েছে। ওই মামলায় কারও বিরুদ্ধে কোনও ধারা চাপানোর কাঠামো তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। সেই কাঠামোর ভিত্তিতে বৃদ্ধের বিরুদ্ধে যে যে ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে, সেটা খতিয়ে দেখেছে বিচারপতি নাগরত্না এবং বিচারপতি শর্মার ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু কোনও ধারার ক্ষেত্রেই সেই শর্তপূরণ হয়নি।
শীর্ষ আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, বৃদ্ধের বিরুদ্ধে যে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৪ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছিল, সেটা কার্যকর হয় না। কারণ বৃদ্ধ এমন কিছু করেননি, যাতে শান্তি বিঘ্নিত হয়। স্রেফ কুরুচিকর শব্দ প্রয়োগ করলেই সেটা অপরাধ হয়ে যায় না, যদি না তার ফলে জনজীবনে বিশৃঙ্খলা তৈরির প্রত্যক্ষ বিপদ থাকে।