কিউয়িদের দেওয়া রেকর্ড রান তাড়া করতে নেমে কর্ণ হয়ে থাকলেন মিলার

Spread the love

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতকে কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। বুধবার টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে যেরকম পারফরম্যান্স করেছে নিউজিল্যান্ড, তাতে বিপক্ষকে তো সাবধান না হলেই, ঘটবে মহাবিপদ। এমনিতেই নিজেদের গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে ভারতের কাছে হারতে হয়েছিল। সেই জ্বালাটা তো রয়েছেই। তাই খোঁচা খাওয়া বাঘের মতোই তারা কিন্তু আক্রমণ করবে রোহিত শর্মা ব্রিগেডকে।

মঙ্গলবার টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ভারত আগেই ফাইনালে চলে গিয়েছিল। আর এদিন দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাঁদিয়ে কিউয়িরা উঠল ফাইনালে। আর ফাইনাল ম্যাচের আগেই বিধ্বংসী মেজাজে নিউজিল্যান্ড। রাচিন রবীন্দ্র এবং কেন উইলিয়ামসনের জোড়া সেঞ্চুরির উপর ভর করে রানের পাহাড় গড়ে কিউয়িরা। সেই সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রেকর্ড দলীয় রান করে তারা। ভেঙে দেয় অস্ট্রেলিয়ার নজির। এদিন নিউজিল্যান্ড ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৬২ রান করে। এটাই এখন এই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। প্রসঙ্গত, চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে ৩৫৬ রান করেছিল। যেটি প্রতিযোগিতার ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্কোর হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানে সেই রেকর্ড ভেঙে দিল কিউয়িরা। এর আগে নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ৩৪৭। ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই রান করেছিল তারা।

টস জিতে এদিন প্রথমে ব্যাটিং নিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। তবে ইনিংসের শুরুর দিকেই উইল ইয়ং-এর উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল তারা। ৭.৫ ওভারে লুঙ্গি এনগিদির বলে এডেন মার্করামকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান উইল ইয়ং। তিনি করেন ২৩ বলে ২১ রান। তখন দলের স্কোর ৪৮। সেই পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরেন রাচিন রবীন্দ্র এবং কেন উইলিয়ামসন। তাঁরা শুধু শক্ত হাতে হালই ধরেননি, বরং নিউজিল্যান্ডকে রেকর্ড স্কোরে পৌঁছতে সাহায্য করেছেন। দ্বিতীয় উইকেটে তাঁরা এদিন ১৬৪ রান যোগ করেন। যা আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের নজির। এর আগে এই নজিরের মালিক ছিলেন ইংল্যান্ডের পল কলিংউড এবং ওয়াইস শাহ। তাঁরা প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে ১৬৩ রানের পার্টনরাশিপ করেছিলেন। সেই রেকর্ড এদিন ভেঙে দেন রাচিন এবং উইলিয়ামসন।

রাচিন রবীন্দ্র শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন। উইল ইয়ং আউট হলে, কেন উইলিয়ামসন এসে সেই আক্রমণের ঝাঁজ আরও বাড়িয়ে দেন। দু’জনে মিলে লাহোরে রীতমতো ঝড় তোলেন। শেষ পর্যন্ত ১০১ বলে ‌১০৮ রান করে আউট হন রাচিন। তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল ১৩টি চার এবং একটি ছক্কায়। কেন উইলিয়ামসন আবার ৯৪ বলে ১০২ রান করেন। মারেন ১০টি চার, ২টি ছয়। এই দুই তারকা আউট হওয়ার পরেও নিউজিল্যান্ডের রানের গতি কমেনি। ড্যারিল মিচেল করেন ৩৭ বলে ৪৯। শেষ দিকে রানের গতি আরও বাড়ান গ্লেন ফিলিপস। তিনি  ২৭ বলে ৪৯ করে অপরাজিত থাকেন। সেই সুবাদেই ৩৫০ রানের গণ্ডি টপকে যায় নিউজিল্যান্ড। প্রোটিয়াদের সামনে জয়ের জন্য রেকর্ড ৩৬৩ রানের লক্ষ্য রাখে কিউয়িরা। প্রোটিয়া বোলারদের মধ্যে লুঙ্গি এনগিদি ৩ উইকেট পেলেও, অনেক রান দিয়েছেন। ১০ ওভার বল করে ৭২ রান দেন তিনি। কাগিসো রাবাদা আবার ১০ ওভারে ৭০ রান দিয়ে ২ উইকেই নেন। ৬ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন উইয়ান মাল্ডার।

পাহাড় প্রমাণ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই রায়ান রিকেলটনের উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪.৫ ওভারে দলের ২০ রানের মাথায় রায়ান রিকেলটনকে (১২ বলে ১৭) সাজঘরে পাঠান ম্যাট হেনরি। এর পর অবশ্য তেম্বা বাভুমা এবং রাসি ভ্যান ডার দাসেন প্রোটিয়াদের ইনিংস এগিয়ে নিয়ে চলেন। দ্বিতীয় উইকেটে তাঁরা ১০৫ রান যোগ করেন। একটা সময়ে মনে হয়েছিল, রাচিন-উইলিয়ামসন জুটির পালটা জবাব হবে বাভুমা-দাসেন জুটি। কিন্তু ৭১ বলে ৫৬ করে আউট হন বাভুমা। তার পর থেকেই নড়ে যায় প্রোটিয়াদের ইনিংস। বাভুমার পরপরই আউট হন ভ্যান ডার দাসেনও। তিনি ৬৬ বলে ৬৯ করে সাজঘরে ফেরেন। এর পর দক্ষিণ আফ্রিকার আর কোনও বড় জুটি হয়নি। তারা নির্দিষ্ট ব্যবধানে উইকেট হারাতে সিরি করে। চারে নেমে এডেন মার্করাম ২৯ বলে ৩১ রান করেছিলেন। শেষে কুম্ভ হয়ে একা লড়াই করে গেলেন ডেভিড মিলার। শতরা পূরণ করলেন। কিন্তু জয় এল না। মিলার শেষ পর্যন্ত ৬৭ বলে ১০০ রান করে অপরাজিত থাকেন। কিন্তু তাঁকে কেউ সঙ্গ দিতে পারেননি। এর নিটফল ৯ উইকেট হারিয়ে ৩১২ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। নিউজিল্যান্ড ৫০ রানে জয় ছিনিয়ে নেয়। কিউয়িদের মধ্যে সবচেয়ে সফল বোলার মিচেল স্যান্টনার। ১০ ওভার বল করে ৪৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেন তিনি। এছাড়া ২টি করে উইকেট নিয়েছেন ম্যাচ হেনরি এবং গ্লেন ফিলিপস। একটি করে উইকেট নিয়েছেন মাইকেল ব্রেসওয়েল এবং রাচিন রবীন্দ্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *