রুশ সেনাদের ভয়াবহ আক্রমণে টিকতে না পেরে কুরস্ক অঞ্চলের দখলকৃত এলাকা থেকে পিছু হটছেন ইউক্রেনীয় সেনারা। এরই মধ্যে অন্তত সাতটি গ্রাম পুনরুদ্ধারের দাবি করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। টেলিগ্রামে পাওয়া বিভিন্ন ভিডিওতে রুশ সেনাদের অগ্রগতি এবং ইউক্রেনীদের আত্মসমর্পণের প্রমাণ মিলছে।
গত আগস্টে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ শহর সুদজাসহ ১,০০০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল দখল করে নেয় ইউক্রেনীয় সেনারা। ওই সময় তারা শত শত রাশিয়ান নাগরিককে ধরে নিয়ে যায়। এই আক্রমণকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ার ভূখণ্ডে সবচেয়ে বড় আক্রমণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুরস্কে অভিযানের পেছনে কিয়েভের লক্ষ্য ছিল- ভবিষ্যতের শান্তি আলোচনায় দর কষাকষির সুযোগ তৈরি করা। তারা চাচ্ছিলো, দখলকৃত ভূমির বিনিময়ে পূর্ব ইউক্রেনে চলমান তীব্র আক্রমণ থেকে পিছু হটতে রাশিয়াকে বাধ্য করতে।
কিন্তু কয়েক মাস পর রাশিয়ানদের শক্তিশালী পাল্টা আক্রমণে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে কুরস্কে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা লাইন। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে রুশ সেনাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছেন উত্তর কোরীয় সৈন্যরা। ফ্রান্টলাইনে শক্তির তারতম্য গড়ে দিতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
যুদ্ধক্ষেত্রের ওপেন-সোর্স মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে, কুরস্ক অঞ্চলে কয়েক হাজার ইউক্রেনীয় সৈন্য ঘেরাও হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব সেনার অধিকাংশই উচ্চ প্রশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ। অর্থাৎ, তাদের হারানোর ক্ষতি পোষানো ইউক্রেনের জন্য অত্যন্ত কঠিন হবে।
এদিকে ফ্রন্টলাইনে ইউক্রেনীয়রা যখন অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতি পার করছে সেই মুহূর্তে রুশ সেনাদের আরেকটি শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের খবর সামনে এসেছে। সুদজা এলাকায় গ্যাস পাইপলাইন ব্যবহার করে একটি দুর্ধর্ষ অভিযান চালিয়েছেন রাশিয়ার সেনারা। ইউক্রেনীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা সুদজা শহরের উপকণ্ঠে পৌঁছানোর জন্য এই অভিযান চালায় তারা। ১.৫ মিটার ব্যাসের ওই গ্যাস পাইপলাইন ধরে রাশিয়ার স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা যুদ্ধের ফ্রন্টলাইন থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার পেছনে গিয়ে ইউক্রেনীয়দের রসদ সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ পথ রুদ্ধ করে দেয়। এতে ইউক্রেনীয় সেনাদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
শনিবার (৮ মার্চ) ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফও এই অভিযানের সত্যতা শিকার করে জানিয়েছে, রাশিয়ার বিশেষ বাহিনী কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত প্রধান শহর সুদজার উপকণ্ঠে পৌঁছানোর জন্য একটি ভূগর্ভস্থ গ্যাস পাইপ ব্যবহার করেছে।
তবে কিয়েভ দাবি করেছে, তারা রুশ সেনাদের সময় মতো শনাক্ত, অবরুদ্ধ এবং ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।
রাশিয়ান সামরিক ব্লগাররা লিখেছেন, ১.৪ মিটার ব্যাসের একটি পাইপের মধ্য দিয়ে হামাগুড়ি গিয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে রুশ সেনারা।
তারা এই আক্রমণকে বীরোচিত বলে অভিহিত করছেন এবং বলছেন, সৈন্যরা তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছে এবং সুদজায় লড়াই চলছে।
এর আগেও ইউক্রেন যুদ্ধে এই ধরনের পাইপলাইন অভিযান চালিয়েছে রুশ সেনারা। পূর্ব ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর আভদিভকা দখলের লড়াইয়ে এমন একটি অভিযানে সফল হয়েছিলেন তারা।
ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত এবং ক্রেমলিনপন্থী ব্লগার ইউরি পোডোলিয়াকা শনিবার গভীর রাতে টেলিগ্রাম পোস্টে দাবি করেন, সুদজায় পিছন দিক থেকে ইউক্রেনীয় ইউনিটগুলিতে আক্রমণ করার আগে কিছু রাশিয়ান সৈন্য পাইপের মধ্যে বেশ কয়েক দিন কাটিয়েছিলেন।
এদিকে রোববার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের সৈন্যরা সুদজার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে চারটি গ্রাম দখল করেছে। মন্ত্রণালয় সুদজার কাছে আরও তিনটি গ্রাম দখলের খবর দেওয়ার একদিন পর এই দাবি করল।
এদিকে পূর্ব ইউক্রেনেও ধীরে কিন্তু ক্রমাগত অগ্রগতি অর্জন করছে রাশিয়ার সেনারা। এর মধ্যে ইউক্রেনকে অস্ত্র এবং গোয়েন্দা তথ্যসহ সব ধরনের সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে দেশটি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে ইউক্রেনকে বাধ্য করাতে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যেকোনো ধরনের শান্তিচুক্তিতে তার দেশের স্থানীয় নিরাপত্তার গ্যারান্টি চান।