সুপ্রিম কোর্টের কলমের খোঁচায় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীর চাকরি গিয়েছে। আজ, সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে সেই সমস্যার সমাধান করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটা পথ দেখালেন তিনি সকলকে। কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতি যে হয়েছে, চাকরি যে বিক্রি হয়েছে সেটা তাঁর অজানা বলে ভরা সভায় জানিয়ে দিলেন। আইনজীবীদের প্যানেল তৈরি করলেন। সেটাও সকলকে জানালেন। আর যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন তাঁদের একটা প্রতিনিধিদলকে যোগাযোগ রাখতে বললেন। জীবন থাকতে চাকরি কারও যেতে দেবেন না বলে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এই চাকরি বিক্রি হওয়া থেকে শুরু করে নিয়োগ দুর্নীতি তাঁর আড়ালেই হয়েছে বলে বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সুপ্রিম কোর্টে আবার রাজ্য সরকার যাবে চাকরিহারাদের জন্যও সেটাও আজ ভরা সভা থেকে বাতলে দেন তিনি। এদিন পাঁচজন আইনজীবীর নামও ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চাকরি বিক্রি হয়েছে, চাকরি চুরি হয়েছে আমি জানিই না। তাও আমাকে খারাপ কথা শুনতে হচ্ছে। কাজ করতে গেলে একটা দুটো ভুল হয়েই যায়। একটা কলমের খোঁচায় জীবনটা সমস্যায় পড়ে গিয়েছে। আমাকে জেলে ভরে দিলেও আমি ডোন্ট কেয়ার। মানুষ যখন সমস্যায় পড়ে তখন তাদের পাশে দাঁড়াতে হয়। আমি কেস স্টাডি করে দেখেছি। যারা যোগ্য বঞ্চিত হয়েছেন। তাঁদের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।’
বাংলাকে বঞ্চিত করার জন্য একটা চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রী। যাঁরা চাকরি হারিয়ে আজ হতাশ তাঁদের বিচার পাইয়ে দিতে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার দরবার করবে। তার জন্য পাঁচজন আইনজীবীকে ঠিক করে ফেলা হয়েছে। সেটাই আজ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই এই বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে চক্রান্ত করা হচ্ছে। সবাইকে অযোগ্য বলার অধিকার কে দিয়েছে। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে যেন না কাঁদে। আমি জেনেশুনে কারও চাকরি খাইনি। সুপ্রিম কোর্ট যোগ্য অযোগ্য বাছাই করে দেয়নি। রাজ্য সরকারকেও বাছতে দেয়নি। এবার এসএসসি’র এই মামলা লড়বেন অভিষেক মনু সিংভি, কপিল সিবাল, রাকেশ দ্বিবেদী, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত ভূষণ। এই পাঁচজন আইনজীবীকে সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হচ্ছে ক্লারিফিকেশন চাওয়ার জন্য। আমরা ক্লারিফিকেশন চাইব আদালতের কাছে। আজকে শিক্ষকরা কি করবে? স্কুল কে চালাবে?’
সুপ্রিম কোর্ট যদি মানবিক হয় তাহলে একরকম পথ নেবেন মুখ্যমন্ত্রী। আর যদি তা না হয় তাহলেও পাঁচটি বিকল্প পথ ভাবা আছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। আজ এই নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘আমি ধরে নিচ্ছি এটা প্লাস হবে। যারা যোগ্য তাদের কাজ করার সুযোগ দেবেন। তাহলে যারা যোগ্য তাদের চাকরি নিশ্চিন্ত করার দায়িত্ব সরকারের। ভাঙা রাস্তা পেরিয়ে সফল পথে যেতে হবে। আপনাদের কেউ স্কুলে যেতে বারণ করেছে। দু’মাসের মধ্যে চাকরি হবে। সুপ্রিম কোর্ট যোগ্য অযোগ্য বাছাই করে দিক। বাংলাকে টার্গেট করা হচ্ছে কেন? দু’মাস সাফার করলে ২০ বছর করতে হবে না। ওই দু’মাসও পুষিয়ে দেব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খাস্তা করতে গিয়ে শিক্ষকদের চাকরি কেড়ে নেবেন না। এ আঘাত আপনাদের নয় আমার সরকারকে আঘাত। তা ফিরিয়ে দেব। সুস্থ বাঘের চেয়ে আহত বাঘ খুব ভয়ঙ্কর। আবার ডাকব।’