আদালতে কেন যোগ্যদের তালিকা জমা দিল না SSC? ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশের পর থেকে এই প্রশ্ন তুলেছেন চাকরিহারারা। চাকরি ফিরে পেতে সুপ্রিম কোর্টে যোগ্যদের তালিকা জমা দিতে রাজ্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি করছেন তাঁরা। চাকরিহারাদের সেই উদ্যোগে সামিল হয়েছে বিরোধী বিজেপিও। আর এই নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাঠগড়ায় তুলে তীব্র আক্রমণ করেছেন বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক শংকর ঘোষ। তাঁর দাবি, যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করলে ফেঁসে যাবেন মুখ্যমন্ত্রীসহ তৃণমূলের তাবড় নেতা। তাই নিজের পিঠ বাঁচাতে যোগ্যদের হাঁড়িকাঠে বলি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শংকরবাবু বলেন, ‘চাকরিহারাদের এই অবস্থার জন্য একমাত্র দায়ী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নাকের ডগায় দুর্নীতি হয়েছে। অথচ তিনি দাবি করছেন যে তিনি কিছু জানেন না? পুরোটা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘাড়ে চাপিয়ে পার পেয়ে যাবেন বলে ভাবছেন? মানুষকে কি এতটাই বোকা ভাবেন উনি? যে পার্থ চট্টোপাধ্যায় দলে ও মন্ত্রিসভায় ওনার ডেপুটি ছিলেন তাঁর ব্যাপারে উনি কোনও খোঁজ রাখতেন না। দিনের পর দিন দুর্নীতি হয়েছে আর উনি কিছুই জানতেন না? এটা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে তো ওনার মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসার কোনও যোগ্যতাই নেই।’
তিনি বলেন, ‘আসলে ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই দায় এড়ানো ও নিজের কৃত কর্মের দায় বিরোধীদের ঘাড়ে চাপাতে শিখে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ তার চরম ফল ভোগ করছে বাঙালি। বিশেষ করে বাংলার যুব সমাজ।’
কিন্তু কেন যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করছে না SSC? শংকরবাবু বলেন, ‘রাজ্যে কোনও স্বশাসিত সংস্থার মর্যাদা রাখেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। SSCও তার ব্যতিক্রম নয়। নইলে যেখানে বাম জমানায় প্রতি বছর SSC পরীক্ষা হত সেখানে গত ১৪ বছরে হাতে গোনা কয়েকটা পরীক্ষা হল কেন?’ শংকরবাবু বলেন, ‘আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেঁসে গেছেন। কারণ কত জনে মিলে কত লোককে টাকা নিয়ে নিয়োগ দিয়েছে কেউ জানে না। আর শেষ পর্যন্ত নতুন কোনও তালিকা সরকার বা SSC প্রকাশ করলে দেখা যাবে তাতেও রয়েছে ভুরি ভুরি অযোগ্য। তাদের OMR শিটও সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ্যে এসে যাবে। তখন আর মুখ লুকানোর জায়গা থাকবে না মুখ্যমন্ত্রীর।’
তিনি বলেন, ‘এছাড়া এমনটাও হতে পারে, সদিচ্ছা দেখিয়ে সরকার বা SSC যোগ্যদের তালিকা বাদ দিলে দেখা যাবে বাদ পড়েছে তৃণমূল নেতাদের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠদের নাম। এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয় স্বজনের নামও বাদ পড়তে পারে। তাতে দলের অন্দরে ক্ষোভ বিক্ষোভ তৈরি হতে পারে। কারণ তৃণমূল তো কেউ নীতি – আদর্শের জন্য করে না। করে, এভাবে লুটে পুটে খাওয়ার জন্য। আর চুরি বন্ধ হয়ে গেলে বা চুরির মাল ফেরত দিতে হলে কেউ তৃণমূল করবে কেন?’
শংকরবাবুর দাবি, ‘ফলে এটা স্পষ্ট যে এই ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষতি ছাড়া কোনও লাভ নেই। ওনার মুখোশ খসে পড়ে গেছে। মুখ্যমন্ত্রীর বিপর্যয় অনিবার্য। চালাকি করতে গিয়ে উনি শাঁখের করাতে পড়েছেন। কেউ আর ওনাকে বাঁচাতে পারবে না।’