বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) উত্তরবঙ্গের চা–বাগানগুলির উন্নতির নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বারবার উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে তা দেখে আসছেন। চা–বাগানে যাঁরা কাজ করেন সেইসব শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলছেন। সেখানে উত্তরবঙ্গের তিন জেলায় পিএফ বকেয়া রয়েছে প্রায় ৪১ কোটি টাকা। যার মধ্যে চা–বাগান শ্রমিকদের বকেয়া পিএফের পরিমাণ ২০ কোটি টাকারও বেশি। চা–বাগান মালিকদের একাংশ নিয়মিত শ্রমিক–কর্মচারীদের পিএফ জমা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ। অথচ বেতন থেকে পিএফের টাকা কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এবার ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় মঙ্গলবার জলপাইগুড়িতে আঞ্চলিক পিএফ কমিশনারের অফিসে যান আলিপুরদুয়ারের সাংসদ মনোজ টিগ্গা।
আর এই খবর কানে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। তাই চা–বাগান শ্রমিকদের বকেয়া পিএফ দ্রুত মেটানোর দাবি তুলে আইএনটিটিইউসি জলপাইগুড়িতে আঞ্চলিক পিএফ কমিশনারের দফতর ঘেরাও করে। এই বিষয়ে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক জানান, ১০ হাজার চা–বাগান শ্রমিক ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘পিএফ থেকে শ্রমিকদের বঞ্চিত করার অভিযোগে কয়েকটি চা–বাগান মালিকের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এমনকী যে সমস্ত সংস্থার বিরুদ্ধে পিএফ খেলাপের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ পিএফ আদায় করতে তৃণমূল কংগ্রেসের ঘেরাওয়ের মধ্যে মনোজ টিগ্গার পিএফ কমিশনারের অফিসে হঠাৎ হাজির হওয়া ঘিরে জোর আলোড়ন শুরু হয়েছে।
পিএফ কমিশনারের দফতরে গিয়ে মোট কতজন চা–শ্রমিকের পিএফ জমা পড়ছে না, সেটা জানতে চান বিজেপি সাংসদ। চা–শ্রমিকদের পিএফ জমা না পড়ায় কতজন বাগান মালিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে সেটাও জানতে চান মনোজ টিগ্গা। এই বিষয়টি নিয়ে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে সোচ্চার হবেন বলে জানান মনোজ।
বিজেপি সাংসদের বক্তব্য, ‘আঞ্চলিক পিএফ কমিশনার দ্রুত আমাকে সব তথ্য দেবেন বলেছেন। সংসদে অধিবেশন মিটলেই বিজেপির চা–শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পিএফ অফিস ঘেরাও করা হবে।’ আর জলপাইগুড়ির আঞ্চলিক পিএফ কমিশনার পবনকুমার বনসাল জানান, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি জেলা মিলিয়ে প্রায় ৪১ কোটি টাকা পিএফ বকেয়া আছে। ২৫টি সংস্থার প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এই পিএফ জমা না পড়ায় গত পাঁচ বছরে উত্তরবঙ্গের এই তিন জেলায় ২৭টি সংস্থার মালিকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। বকেয়া পিএফের টাকা উদ্ধার করতে নভেম্বর মাস থেকে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। তিনমাস ধরে তা চলবে। আর এই জলপাইগুড়ির আঞ্চলিক পিএফ অফিসে দু’লাখ ১৫ হাজারের মতো গ্রাহক রয়েছেন। যাঁদের অ্যাকাউন্টে পিএফের টাকা জমা পড়ে। তার মধ্যে চা–বাগান শ্রমিকদের সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ। আঞ্চলিক পিএফ কমিশনার পবনকুমার বনসাল বলেন, ‘পিএফের টাকা যদি জমা না পড়ে তাহলে আইন অনুযায়ী অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হবে। চা–বাগান সংস্থার মালিকের সম্পত্তি ক্রোক করা হতে পারে। এমনকী সংস্থার মালিক গ্রেফতার হবেন।’