জেলের ভিতর জাতপাতের ভেদাভেদ আর বরদাস্ত নয়

Spread the love

সংশোধনাগারের অন্দরে জাতপাতের ভিত্তিতে করা পক্ষপাতদুষ্ট আচরণে পাকাপাকিভাবে ইতি টানার ব্যবস্থা করল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালত তার রায়ে জানিয়েছে, এত দিন ধরে সংশোধনাগারগুলিতে জাতপাত-নির্ভর যে আচরণবিধি পালন করা হয়েছে, তা অসাংবিধানিক।

এই অসাংবিধানিক আচরণ অবিলম্বে বন্ধ করতে রাজ্য সরকারগুলিকে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট। সারা দেশের প্রত্যেকটি রাজ্যের সরকারকে সংশোধনাগারের অন্দরের আচরণবিধি বা ‘প্রিজন ম্যানুয়াল’ সংশোধন করতে বলা হয়েছে সেই নির্দেশে।

এদিন এই রায় ঘোষণা করেন দেশের প্রধান বিচারপতি ধনঞ্জয় ওয়াই চন্দ্রচূড়। ভারতের বিভিন্ন কারাগারের অন্দরে বিভিন্ন জাতিভুক্ত বন্দি, বিশেষ করে তপশিলি জাতি ও উপজাতি, আদিবাসী-সহ সংখ্য়ালঘু বিভিন্ন জনজাতির মানুষের সঙ্গে যে বিভেদ করা হয়, তা অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

এই বিষয়ে রাজ্য সরকারগুলির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারকেও একগুচ্ছ নির্দেশ পালন করতে বলেছেন প্রধান বিচারপতি। আদালতের নির্দেশ, সংশোধনাগারের অন্দরে থাকা-খাওয়া বা অন্যান্য দৈনন্দিন কাজের জন্য বন্দিদের জাতি অনুসারে কোনও ব্যবস্থাপনা করা যাবে না।

সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বলা হয়, ‘জাতপাতের ভিত্তিতে তৈরি করা যেকোনও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিভেদ আদতে ঔপনিবেশিক মানসিকতারই সাক্ষ্য বহন করে। সংবিধানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সমংশোধনাগারের অন্দরের পরিবেশ অবশ্যই মানবিক হতে হবে। যা আবাসিকদের মানসিক ও শারীরিক কল্যাণের কথা মাথায় রেখে নির্দিষ্ট করতে হবে।’

এদিনের এই বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি ছাড়াও ছিলেন বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রা। আদালতের পক্ষ থেকে দেশের সবক’টি রাজ্যের সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোথাও কোনও সংশোধনাগারে এখনও এমন বিভেদমূলক আচরণ করা হয় কিনা, তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সংশোধনাগারের আচরণবিধি বদলে তারই সংশোধন করতে হবে এবং পুরো বিষয়টি নিয়ে আগামী তিনমাসের মধ্যে আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে হবে।

অন্যদিকে, সংশোধনাগারের অন্দরে যাতে কোনও আবাসিকের উপর জাতিগত কারণে কোনও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ না করা হয়, তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারকেও নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

২০১৬ সালে কেন্দ্র যে ‘মডেল প্রিজন রুলস’ বা সংশোধনাগারের জন্য আদর্শ আচরণবিধি চালু করেছিল, তাতেও সংশোধন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ, এই আচরণবিধিও জাতিভিত্তিক পক্ষপাতিত্বকে প্রশ্রয় দিতে পারে।

আদালতের বক্তব্য, এই ধরনের ভেদাভেদ আদতে সংবিধানে বর্ণিত সমানাধিকারের নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী। এই কারণেই সংশ্লিষ্ট সংশোধনাগারগুলির কর্তৃপক্ষকে সংবিধান মেনে আচরণবিধি নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *