ঝরঝরে ইংরেজি ভাষায় কথা বলছেন।আবার জ্যামে গাড়ি দাঁড়ালে হাতে থাকা লাল সালু দিয়ে মুছে দেব গাড়িটা?জিজ্ঞেস করছেন।কেউ তাতে রাজি হচ্ছেন আবার কেউ দু:ছাই ব্যবহার করে সরিয়ে দিচ্ছেন। পেটের টানে বছর ৮০-র সমীর গুপ্ত তীব্র রোদের তাপে এয়ারপোর্ট আড়াই নম্বর কাটা গেটের সামনে গাড়ি মুছে চলেছেন দীর্ঘ ১১ বছর ধরে। ছেলে,মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি,সাথে যেটুকু কানাকড়ি ছিল সমস্ত কিছু চিট ফান্ডে খোয়া গেছে। ফলে পেটের ভাত জোগাড় করতে পরিশ্রম করে চলেছেন সমীর বাবু।বাড়িতে রয়েছে অসুস্থ স্ত্রী। স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে নাজেহাল হয়ে পড়েন তিনি,তবুও চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেন না। পাশাপাশি কারোর কাছে হাত পাততে নারাজ তিনি।সমীর বাবুর বক্তব্য মৃত্যুর আগে পর্যন্ত খেটে খাবো,কিন্তু কারোর কাছে হাত পাতবো না।হ্যাঁ ঠিক এই নীতির মানুষ তিনি।তাই তো নিজের হাজার সমস্যা ও বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও খেটে খাচ্ছেন সমীরবাবু।
নিজের নার্ভের সমস্যা, সমীর বাবুর বাম হাত ক্রমাগত নড়তে থাকে, আর সেইভাবেই জ্যামে গাড়ি দাঁড়ালে চালকদের জিজ্ঞেস করে যান,গাড়িটা একটু মুছে দেব?আর তাতে বেশিভাগ মানুষ নাই বলে।আবার কোনও গাড়ি মুছে দিলে মাত্র ৬ টাকা,১০ টাকা তার হাতে ধরিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যান গাড়ির মালিকরা।সমীর বাবুকে প্রত্যেক দিন ১১ টা থেকে দেখা যায় কাটা গেটের সামনে।
প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে পুড়ে কালো হয়ে গেছে গায়ের রং, অপরিষ্কার জামা প্যান্ট পরে হাতে দুটি মাত্র সালু নিয়ে অনবরত পরিশ্রম করে চলেছেন। আবার কখনও কাজ করতে করতে হাপিয়ে যান সমীরবাবু,তখন উল্টো দিকের একটি দোকানের সামনে বিশ্রাম নেন। এই বয়সে দাঁড়িয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন সমীর গুপ্ত। তার এই কাজকে কুর্নিশ জানাই। যে বয়সে বিশ্রাম করার দরকার সেই বয়সে নিজের ও স্ত্রীর জন্য অবিরাম কাজ করে চলেছেন তিনি।কোনো সহৃদয় ব্যক্তি যদি সমীর বাবুকে সাহায্য করতে চান,তাহলে অবশ্যই যোগাযোগ করতে পারেন।