ট্রাম্প-বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল আমেরিকা

Spread the love

অগাধ আস্থা রেখেই দ্বিতীয়বার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদে বসিয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা। তার তিন মাসও পূরণ হয়নি। এরমধ্যেই ট্রাম্প নীতির বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজপথে নামলেন হাজার হাজার মানুষ। ওয়াশিংটন, নিউ ইয়র্ক, হিউস্টন, ফ্লোরিডা, কলোরাডো, লস অ্যাঞ্জেলস- সর্বত্রই একই দৃশ্য। হাতে প্ল্যাকার্ড। দেশের ৫০টি প্রদেশের অন্তত ১২০০-র বেশি এলাকায় দেখা গিয়েছে‘হ্যান্ডস অফ’ প্রোটেস্ট।দেড়শোরও বেশি সংগঠন রয়েছে এই বিক্ষোভ-মিছিলের নেতৃত্বে। যার মধ্যে মানবাধিকার সংগঠন যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে সমকামী আন্দোলনকারী, শ্রমিক ইউনিয়নরা। সকলেরই দাবি, ‘আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হারাচ্ছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনও রাজা নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফ্যাসিবাদ চলবে না।’

প্রশাসনের পর পর কর্মীছাঁটাই থেকে শুরু করে অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানো, মার্কিন নাগরিকত্বের জন্য নতুন নিয়ম চালু কিংবা অতি সম্প্রতি তাঁর শুল্কনীতি-শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, সারা বিশ্বে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। যে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ট্রাম্প-বিরোধী মিছিল বেরিয়েছে লন্ডন এবং বার্লিনেও। লন্ডনের রাস্তায় ট্রাম্প-বিরোধী মিছিল থেকে এক মহিলা বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যা হচ্ছে, সেটা সকলের সমস্যা। আমরা তাই প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছি। অর্থনীতি নিয়ে ট্রাম্প পাগলামি করছেন। গোটা পৃথিবীকে উনি মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।’ বার্লিনে এক বৃদ্ধ বলেন, ‘সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি করেছেন ট্রাম্প। উনি পাগল হয়ে গিয়েছেন।’

অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদী জমায়েত দেখা গিয়েছে রাজধানী ওয়াশিংটনেই। হোয়াইট হাউসের কাছে ন্যাশনাল মলে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন। দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিবাদ জানাতে রাজধানীতে এসেছেন অনেকে। তাঁদের ট্রাম্প-বিরোধী স্লোগানে মুখরিত হয়েছে রাস্তাঘাট। কিছু সংগঠনের হিসাব বলছে, শুধু ওয়াশিংটনেই ২০ হাজার মানুষ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জমায়েতে শামিল হয়েছেন। ওয়াশিংটনের রাস্তায় স্লোগান দিতে দিতে এক প্রৌঢ় বলেন, ‘নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে বাসে করে আমরা প্রায় ১০০ জন এখানে প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। এই প্রশাসনের জন্য বিশ্ব জুড়ে বন্ধুদের হারাচ্ছি আমরা। সকলের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে। দেশের মধ্যেও তারা বিভাজন তৈরি করছে। আমাদের সরকারকে ওরা ধ্বংস করে দিচ্ছে।’ ক্ষমতায় আসার পর গর্ভপাত বিরোধী নীতি গ্রহণ করেছিলেন ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে লস অ্যাঞ্জেলেসে এক তরুণীর হাতে প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। তাতে লেখা ছিল, ‘আমার গর্ভ থেকে বেরিয়ে যাও।’ম্যানহাটনে ট্রাম্প-বিরোধী মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে এক প্রতিবাদী বলেন, ‘আমার ভীষণ ভীষণ রাগ হচ্ছে। বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত একদল মানুষ নিজেদের ইচ্ছামতো আমাদের দেশটাকে চালাচ্ছেন। আমাদের দেশ আর মহান নেই।’ এদিকে, পড়ুয়াদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এরপরেই সেখানে ৩৬ জন বিশেষ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে হোয়াইট হাউস ট্রাম্পের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে ডেমোক্র্যাটদের নিশান করে বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান স্পষ্ট। তিনি সব সময়ই মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও যোগ্য সুবিধাভোগীদের জন্য জনস্বাস্থ্য বিমার অধিকারকে রক্ষা করবেন। ট্রাম্পও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমার নীতি কখনও বদলাবে না।’ অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটরা চায় অবৈধ অভিবাসীদের সামাজিক নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা প্রদান করা। যা সরকারের প্রকল্পগুলিকে ধ্বংস করে দেবে এবং মার্কিন প্রবীণদের ধ্বংস করবে।’সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। ভারতীয় পণ্যে নেওয়া হবে ২৬ শতাংশ শুল্ক। এর ফলে মার্কিন অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *