একদিকে যখন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য আকাশছোঁয়া, ঠিক সেই সময়ে বেসরকারি স্কুলগুলির বেলাগাম খরচ ভারতের সাধারণ নাগরিকদের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে। এই বাস্তব কারও অজানা নয়। কিন্তু, আজ এটা নিয়ে নতুন করে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। যার নেপথ্যে রয়েছে একজন হতাশ ও ক্ষুব্ধ অভিভাবকের শেয়ার করা একটি ভিডিয়ো। যা ইতিমধ্যেই সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
ওই ব্যক্তির অভিযোগ, বেসরকারি স্কুলগুলি যেন এক-একটা শপিং মল। যাদের কাছে শিক্ষাদানের থেকে অনেক বেশি এবং বস্তুত – সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল – ব্যবসা! সেই ব্যবসায় যাতে সর্বোচ্চ মুনাফা কামানো যায়, তার জন্য পাঠ্যবইয়ের দাম পর্যন্ত আমজনতার নাগালের বাইরে রাখা হচ্ছে! এমনকী, একটি স্কুলের বইয়ের দাম ৬,০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে!
ওই ব্যক্তির মতে, এই ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র যে পড়ুয়াদের স্কুলব্যাগের বোঝা বাড়াচ্ছে, তাই নয়। একইসঙ্গে, তাদের অভিভাবকদের উপরেও বিপুল আর্থিক ভার চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ভিডিয়ো বার্তায় ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘আমি আজ পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য তৈরি পাঠ্যবই কিনলাম।’ এরপরই রীতিমতো ব্যঙ্গের সুরে তিনি বলেন, ‘এই বইয়ের কভার পেজ (মলাট) নির্ঘাৎ রুপো দিয়ে তৈরি করা হয়েছে! আর, যদি সেটা না হয়, তাহলে এই বইয়ে যত ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলিতে অবশ্যই সিলভার মার্ক রয়েছে। সেই কারণেই এই বইগুলি এত দামি। অথবা, এমনটা হতে পারে, যে মুহূর্তে বাচ্চারা এই বই হাতে নেবে, সঙ্গে সঙ্গে একেবারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই বইয়ে লেখা সমস্ত তথ্য বাচ্চাদের স্মৃতিতে গেঁথে যাবে! যদি এর মধ্যে একটিও না ঘটে থাকে, তাহলে কেন এই বইগুলি কিনতে পড়ুয়াদের এবং তাদের বাবা-মায়েদের ৫,০০০ থেকে ৬,০০০ টাকা খরচ করতে হবে?’
সম্প্রতি দেশে নয়া শিক্ষা নীতি চালু করা হয়েছে। কিন্তু, সেই নীতির অধীনে যেসমস্ত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে বেসরকারি স্কুলগুলির বাস্তব আচরণের যে কতটা ফারাক রয়েছে, নিজের ভিডিয়ো বার্তায় সেটাই তুলে ধরেছেন ওই ব্যক্তি। প্রশ্ন তুলেছেন কথা ও কাজের মধ্যেকার এই ফারাক নিয়ে।
তিনি বলেন, ‘নয়া শিক্ষা বলছে – এক দেশ, এক শ্রেণি, এক পাঠ্যসূচি, এক প্রকাশনার কথা। তাহলে কেন বেসরকারি স্কুলগুলি এত চড়া দামে বই বিক্রি করছে? একদিকে তারা বাচ্চাদের স্কুল ব্যাগের ওজন বাড়াচ্ছে। একইসঙ্গে, অভিভাবকদের উপর বিপুল খরচের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেন স্কুলগুলি এমনটা করছে।’
এই ভিডিয়ো মুহূর্তে ভাইরাল হয়েছে। এবং নেট নাগরিকরা অধিকাংশই ওই ব্যক্তিকে সমর্থন করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, অবিলম্বে স্কুলগুলির নীতিতে সংস্কার আনা দরকার।
একজন ইউজার লিখেছেন, ‘আমাদের এমন আইন আনতে হবে, যেখানে স্কুলগুলি একমাত্র শিক্ষা ছাড়া আর কিছুই বিক্রি করতে পারবে না। স্কুলগুলি নির্দিষ্ট কিছু পণ্য বিক্রি করে। যা সেই পণ্যের দাম মারাত্মক হারে বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে শিক্ষানির্ভর খুচরো দোকানদার ও ব্যবসায়ীরাও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
আরও একজন কমেন্ট করেছেন, ‘এটা একটা জোর ধাক্কা! স্কুলগুলি সত্যিই শপিং মলে পরিণত হয়েছে। যারা বলছে, সমস্ত কিছু এখান থেকে কিনতে হবে। কিন্ত, শিক্ষালাভ করতে চাইলে অন্য জায়গায় যেতে হবে। মনে হচ্ছে, এবার অভিভাবকদের সংগঠন তৈরি করার সময় এসে গিয়েছে। যাতে স্কুলের ফি এবং প্রকৃত শিক্ষালাভ নিয়ে বোঝাপড়া করা যায়।’
তৃতীয় এক ব্যক্তির বক্তব্য হল, ‘এটা দিনে দিনে পুরোপুরি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। পুরোটাই ব্যবসা, এর সঙ্গে প্রকৃত শিক্ষার কোনও সম্পর্ক নেই। আমি সপ্তম শ্রেণির বই ও নোটবুক কেনার জন্য ৭,০০০ টাকা খরচ করেছি! ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি!’