নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গিয়েছিল। খেলার ফল ছিল তখন মোহনবাগানের পক্ষে ১-০। অর্থাৎ দুই লেগ মিলিয়ে ২-২ ড্র চলছিল ম্যাচ। সকলে যখন ভাবতে শুরু করেছেন, ম্যাচটি টাইব্রেকারেই যাবে, তখনই ফিনিক্স পাখির মতো জ্বলে উঠলেন আপুইয়া। দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরিয় টাইমের একেবারে শেষ লগ্নে এসে দুরন্ত গোল আপুইয়ার। গোটা যুবভারতী জুড়ে তখন উল্লাস, উচ্ছ্বাস, আবেগের শব্দব্রহ্ম।
টানটান উত্তেজনার সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত ২-০ জয় ছিনিয়ে নেয় মোহনবাগান। আইএসএলের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দুই লেগ মিলিয়ে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড ৩-২ গোলে জিতে উঠল ফাইনালে। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ বেঙ্গালুরু এফসি। তবে চমর উত্তেজনার ম্যাচ জয়ের পর উল্লসিত ছিলেন সবুজ-মেরুনের স্প্যানিশ কোচ হোসে মোলিনাও। তবে যখন সাংবাদিক সম্মেলনে নিজের যাবতীয় উচ্ছ্বাস, আবেগকে চেপে, বাস্তবের জমিতে পা রাখলেন। বলে দিলেন, ‘এই জয়টা সত্যিই কঠিন ছিল।’
মোলিনা বলেন, ‘এই জয়টা সত্যিই কঠিন ছিল। কারণ, জামশেদপুর যথেষ্ট ভালো খেলেছে। ওরা সত্যিই ভালো ডিফেন্স করেছে এবং আমাদের চাপে ফেলে জিততেও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমাদের এই জয়টা প্রাপ্য ছিল। আপুইয়ার শেষ মুহূর্তের গোলটি অসাধারণ ছিল। আমাদের পক্ষে এক দুর্দান্ত মুহূর্ত। এই গোলটা পাওয়ার জন্য আমরা ৯০ মিনিট ধরে অনেক লড়াই করেছি। অবশেষে, আপুইয়া হয়ে ওঠে আমাদের জন্য সেই ভাগ্যবান ব্যক্তি, যে গোলটা করেছে। ওর এটা প্রাপ্য ছিল।’
আপুইয়ার গোল নিয়ে কোচ বলেন, ‘শেষ মুহূর্তে গোল করার সময় আপুইয়া নিশ্চয়ই ভাবছিল, আমি শুট করব আর গোল করব। কারণ কেউ যদি সেটা না ভাবে, তা হলে সে শট নেবেই না। ঠিক তাই। আর এটাই সবার সম্মিলিত পরিশ্রমের ফল। আর এই ধরনের একটা দলের কোচ হওয়ায় আমি খুশি।’
জামশেদপুরের বিরুদ্ধে প্রথম লেগে ১-২ হারতে হয়েছিল মোহনবাগানকে। এদিন মোলিনা বলছিলেন, ‘আমি দলের পারফরম্যান্সে, বিশেষ করে শেষ পর্যন্ত যেভাবে ওরা লড়াই করেছে, তাতে খুব খুশি। ওদের বলেছিলাম, নিজেদের উপর আস্থা রাখো, শান্ত থাকো, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলো। কখনও হতাশ হবে না। ওরা পরিকল্পনা অনুযায়ীই খেলেছে। অবশেষে আমাদের যা প্রাপ্য ছিল, সেটাই পেয়েছি।’
১২ এপ্রিল ফাইনালে মোহনবাগানের মুখোমুখি হতে চলেছে বেঙ্গালুরু এফসি। গত বার শিল্ড জেতার পরেও, নক আউট ফাইনালে মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে হেরে গিয়েছিল সবুজ-মেরুন বাহিনী। এ বার ফের আইএসএলের ইতিহাসে জোড়া খেতাব জয়ের সুযোগ এসে গিয়েছে তাদের সামনে। সে কথা মাথায় রেখে মোলিনা বলছিলেন, ‘ফাইনালে কেউই ফেভারিট নয়। যে কোনও কিছু ঘটতে পারে। অবশ্যই, আমরা নিজেদের উপর আস্থা রাখি। আমাদের নিজেদের উপর ভরসা রাখি। আমরা মনে করি, যদি আমরা আমাদের সেরা খেলাটা খেলতে পারি, তা হলে আমরা ট্রফি জিততে পারব। কিন্তু আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এখন আমাদের সবার আগে রিকভার করতে হবে। আমরা প্রতিপক্ষকে সম্মান করি। ওরা পুরো মরশুমে দারুণ খেলেছে।’