মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে ২৭ বছর পর ঘটল এক বিশেষ ঘটনা

Spread the love

অবশেষে সীতারাম ইয়েচুরির উত্তরসূরিকে বেছে নিল সিপিআই(এম)। দলের নয়া সাধারণ সম্পাদক হলেন – কেরালার সিপিআই(এম) নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মারিয়াম আলেকজান্ডার বেবি। মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে তাঁকে এই পদে বসানো হল। তাও এমন একটা সময়ে, যখন সারা দেশে কার্যত অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগছে গোটা দল!

প্রসঙ্গত, সারা দেশের মধ্যে একমাত্র বেবির রাজ্য কেরালাতেই সরকারে রয়েছে সিপিআই(এম) তথা বামেরা। একদা বাম দুর্গ হিসাবে পরিচিত বাংলা ও ত্রিপুরা তাদের হাতছাড়া হয়েছে। এদিকে, আগামী বছরই বাংলা এবং কেরালায় বিধানসভা নির্বাচন। এই অবস্থায় দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বে মুখবদল করে কেরালায় ক্ষমতা কি ধরে রাখতে পারবে সিপিআই(এম)? বাংলায় কি শূন্য থেকে ফের নতুন করে শুরু করতে পারবে তারা? আপাতত এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর অধরা।

এদিকে, বেবি সিপিআই(এম)-এর নয়া সাধারণ সম্পাদক হতেই তথ্যাভিজ্ঞ মহলের একাংশ বলতে শুরু করেছে – লাল পার্টিতে দক্ষিণী প্রভাব আরও বাড়ল। যদিও বেবি কিন্তু সর্বসম্মতিক্রমেই তাঁর নতুন দায়িত্ব লাভ করেছেন। সিপিআই(এম) যে নয়া বয়সবিধি চালু করেছে, সেই অনুসারে – বেবিকে আপাতত দুই দফায় সাধারণ সম্পাদক পদে রাখার কথা ভাবা হয়েছে। অর্থাৎ – ৩ বছর করে মোট ৬ বছর ওই পদে থাকবেন তিনি। প্রসঙ্গত, শনিবারই ৭০ বছর বয়স হয়েছে বেবির।

এখানে বলে রাখা ভালো যে সিপিআই(এম)-এর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে দক্ষিণীদের উপস্থিতি নতুন কিছু নয়। এর আগে ইএমএস নাম্বুদিরিপাদ (কেরালা) এবং পি সুন্দরাইয়া (অন্ধ্রপ্রদেশ) দলের নেতা ছিলেন। পরবর্তীতে (মাঝে দায়িত্বে ছিলেন পঞ্জাবের হরকিষেণ সিং সুরজিৎ) প্রকাশ কারাট এবং সীতারাম ইয়েচুরি সাধারণ সম্পাদক হন। তাঁরা দু’জন যথাক্রমে – কেরালা ও অন্ধ্রপ্রদেশের মানুষ।

বেবির এই পদলাভে আরও বলা হচ্ছে, ফের একবার কোনও সংখ্যালঘু প্রতিনিধিকে দলের দায়িত্ব দেওয়া হল। উল্লেখ্য, এর আগে একটা দীর্ঘ সময় হরকিষেণ সিং সুরজিৎ ছিলেন দলের নেতা ছিলেন। তিনি ছিলেন সংখ্যালঘু শিখ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। আর, বেবি প্রতিনিধিত্ব করছেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের।

এদিকে, বয়সজনিত কারণে এবারের পার্টি কংগ্রেসেই পলিটব্যুরোর পদ থেকে অব্যাহতি নিলেন প্রকাশ কারাট, বৃন্দা কারাট, সুহাসিনী আলি, মানিক সরকার, সূর্যকান্ত মিশ্র এবং জি রামকৃষ্ণন। একমাত্র ‘ব্যতিক্রম’ হিসাবে পলিটব্যুরোয় রয়ে গেলেন পিনারাই বিজয়ন। বাংলা থেকে সূর্যকান্ত মিশ্রের বদলে পলিটব্যুরোর সদস্য হলেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য।

নেতৃত্বে প্রজন্ম বদলের পাশাপাশি আরও একটি কারণে মাদুরাই পার্টি কংগ্রেস উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকল। তা হল – নেতৃত্ব নিয়ে ভোটাভোটি! তথ্য বলছে, প্রায় ২৭ বছর আগে কলকাতায় আয়োজিত পার্টি কংগ্রেসে ভোটাভুটি হয়েছিল মূলত দু’টি কারণে। প্রথমত, দল কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে থাকবে কিনা এবং দ্বিতীয়ত – সাংগঠনিক কমিটিতে মহিলা প্রতিনিধিদের উপস্থিতির ন্যূনতম অনুপাত কত হবে, তা নিয়ে।

কিন্তু, এবারের ভোটাভুটি হয় দলের নেতা কে হবেন, বা কে হবেন না, তা নিয়ে! নিয়ম অনুসারে – পলিটব্যুরোর কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাট বিদায়ী কমিটির তরফে পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটির প্রস্তাবিত প্যানেলের নামের তালিকা সর্বসমক্ষে পেশ করেন। তা নিয়ে বাকিদের মতামত জানতে চাওয়া হয়। তখনই মহারাষ্ট্রের সিপিআই(এম) নেতা ডিএল কারাড জানান, তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান।

এর ফলে ভোটাভুটি হয়। কিন্তু, কারাড হেরে যান। পার্টি কংগ্রেসে উপস্থিত ৭৩২ জন প্রতিনিধির মধ্য়ে তাঁকে ভোট দেন মাত্র ৩১ জন! ফলত, প্রকাশ কারাটের পেশ করা প্যানেলই স্বীকৃতি লাভ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *