চিকিৎসার নামে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ মিশিয়ে একটা জগাখিচুড়ি তৈরি করা হবে, আর রোগীদের সেই ওষুধ খাওয়ানো হবে, এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। ‘মিক্সোপ্যাথি’ নিয়ে এভাবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করল ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্য়াসোসিয়েশন (আইএমএ)।
শনিবার দেরাদুনের আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে একথা বলেন আইএমএ-র নবনির্বাচিত সভাপতি ডা. দিলীপ ভানুশালী।
ডা. ভানুশালী এই প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্পষ্ট বলেন, মিক্সোপ্যাথি একটা ‘ভয়ঙ্কর’ জিনিস। তাঁর অভিযোগ, ‘যেখানে স্বয়ং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা রয়েছে, তা উপেক্ষা করেই প্রায় ৮০ শতাংশ বিকল্প ক্ষেত্রের চিকিৎসকরা মডার্ন মেডিসিন প্রেসক্রাইব করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মোটেও আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্য়াথি অথবা অন্য়ান্য বিকল্প চিকিৎসা শাস্ত্রের বিরোধী নই। কিন্তু, সেগুলির ক্ষেত্রে যে নির্দিষ্ট নিয়মাবলী রয়েছে, সেই অনুসারেই চিকিৎসা করা হোক। আমরা যেটার বিরোধিতা করছি, তা হল মিস্কোপ্যাথি। কারণ, এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করে কোনও লাভ হয় না।’
ইদানীং মিক্সোপ্য়াথি নিয়ে নানা মহলের তরফে প্রচারও করা হচ্ছে। যাতে আমজনতা এই ধরনের চিকিৎসার প্রতি আকর্ষিত হন। এবং এই চিকিৎসা করাতে রাজি হন। যা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ট্রেন্ড বলে মনে করছে আইএমএ।
এই প্রসঙ্গে সংস্থার নয়া সভাপতি ডা. ভানুশালী বলেন, ‘যাঁদের আধুনিক চিকিৎসা এবং মডার্ন মেডিসিন সম্পর্কে কোনও জ্ঞান নেই, তাঁরা যখন রোগীকে এই ধরনের ওষুধ খেতে বলেন, তখন হয়তো তাঁরা এমন কোনও চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে বসেন, যাতে আদতে রোগীর ক্ষতি হতে পারে।’
এক্ষেত্রে বিশেষ করে যে ভয়ঙ্কর সম্ভাবনাগুলির দিকে ডা. ভানুশালী সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন, সেগুলি হল – কোনও কিছু না বুঝেই স্টেরয়েড বা অ্য়ান্টিবায়োটিকের মতো ওষুধগুলির ওভারডোজ লিখে দেওয়া। যার ফল মারাত্মক হতে পারে।
কারণ, রোগীর তো এই বিষয়ে জানার কথা নয়। চিকিৎসকেরই দায়িত্ব হল, তাঁকে সঠিক পরিমাণ ওষুধ খেতে বলা। কিন্তু, সেই চিকিৎসকই যদি মডার্ন মেডিসিন সম্পর্কে সম্পূর্ণ পড়াশোনা না করে থাকেন, তাহলে রোগীর জীবনের নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নেবে?
এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অ্যালোপ্যাথি নিয়ে পড়াশোনা করা চিকিৎসকদের কতটা পরিশ্রম করতে হয় ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি আয়ত্ব করতে কতটা সময় দিতে হয়, সেই সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন ডা. ভানুশালী।
তিনি উল্লেখ করেন, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুসারে যাঁরা শল্যচিকিৎসক হন, তাঁদের প্রায় আট থেকে ১০ বছর শুধু পড়াশোনা করতে হয় এবং প্রশিক্ষণ নিতে হয়। সেখানে আয়ুর্বেদ ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরা কয়েক মাসের কিছু কোর্স করেই মডার্ন মেডিসিনের নাম প্রেসক্রিপশনে লিখে দিচ্ছেন! এটা কীভাবে করা যায়?
ডা. ভানুশালী প্রশ্ন তোলেন, ‘আপনি কীভাবে আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি এবং ইউনানি চিকিৎসকদের মাত্র এক বছরের একটা প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের একজন অ্য়ালোপ্যাথি শল্যচিকিৎসকের সমতুল্য দায়িত্ব পালনের অনুমতি দিতে পারেন? তাঁরা কি আদৌ এভাবে রোগীর সঠিক চিকিৎসা করতে পারবেন?’