মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। শনিবার হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি রাজা বসুচৌধুরীর বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, এরকম অভিযোগ এলে আদালত চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না। শান্তিরক্ষা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে রাজ্য পুলিশকে কাজ করতে হবে। যারা প্রকৃত দোষী, তাদের চিহ্নিত করারও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। শুধু তাই নয়, হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে রাজ্যের অন্যত্র এরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে সেখানেও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
আর হাইকোর্ট সেই নির্দেশ দিয়েছে, সেটা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে। ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে গত কয়েকদিন ধরে মুর্শিদাবাদে জঙ্গিপুর, সামশেরগঞ্জের মতো এলাকায় যে তাণ্ডব চলছে, সেই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন তিনি। শনিবার সেই মামলার শুনানিতে শুভেন্দুর আইনজীবী দাবি করেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিএসএফকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসন কাজ করতে দিচ্ছে না। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক।
যদিও শুভেন্দুর আইনজীবীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। হাইকোর্টের শুনানিতে রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়, আপাতত মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এডিজি পর্যায়ের আধিকারিক মোতায়েন করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ১৩৬ জনকে। বিএসএফের কাজে কোনওরকম বাধা দেওয়া হচ্ছে না। দক্ষ অফিসাররা পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সামশেরগঞ্জে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার পৌঁছে যাবেন।
ওয়াকফ আইন কেন্দ্রের কিন্তু….স্মরণ করালেন মমতা
তারইমধ্যে শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘সবার কাছে আবেদন, সব ধর্মের সকল মানুষের কাছে আমার একান্ত আবেদন, আপনারা দয়া করে শান্ত থাকুন, সংযত থাকুন। ধর্মের নামে কোনও অ-ধার্মিক আচরণ করবেন না।’
সেইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা উস্কানি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা আমরা নেব। কোনও হিংসাত্মক কার্যকলাপকে আমরা প্রশ্রয় দিই না। কিছু রাজনৈতিক দল ধর্মকে অপব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছেন। তাদের প্ররোচনায় পা দেবেন না। আমি মনে করি, ধর্ম মানে মানবিকতা, সহৃদয়তা, সভ্যতা ও সম্প্রীতি। সকলে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখুন – এই আমার আবেদন।’
মুখ্যমন্ত্রী আরও স্মরণ করিয়ে দেন, যে ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন নিয়ে হিংসা ছড়িয়েছে, সেটা পাশ করিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য সরকার সেই আইন তৈরি করেনি বলে স্মরণ করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন, যে আইনের বিরুদ্ধে অনেকে উত্তেজিত, সেই আইনটি কিন্তু আমরা করিনি। আইনটি কেন্দ্রীয় সরকার করেছে। তাই উত্তর যা চাওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চাইতে হবে। আমরা এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে বলেছি – আমরা এই আইনকে সমর্থন করিনা। এই আইন আমাদের রাজ্যে লাগুও হবে না।’
‘ন্যূনতম লজ্জা থাকলে পদত্যাগ করুন’, মমতাকে আক্রমণ শুভেন্দুর
যদিও মুখ্যমন্ত্রীর সেই বার্তার পরে পালটা মমতাকে আক্রমণ শানিয়েছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘ন্যূনতম লজ্জা থাকলে পদত্যাগ করুন। রাজ্যে অরাজকতার আগুন জ্বেলে দিয়ে রাজনীতির রুটি সেঁকছেন আপনি। উসকানি আপনি দিয়েছেন তাই দায় আপনার, এখন পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে বিপাকে পড়ে আবেদন জানাচ্ছেন।’ সেইসঙ্গে তিনি বলেন, এই ‘ধ্বংসকারী উন্মাদরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে যে, ওরা আপনার ওপর নির্ভরশীল নয় বরং আপনি ওদের ওপর নির্ভরশীল, তাই ওদের বয়ে গিয়েছে আপনার আবেদন শুনতে।’
সেই রাজনৈতিক তরজার মধ্যেই রাজ্য পুলিশের ডিজি জানান, শুক্রবার সুতিতে গুলি চালানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চার রাউন্ড গুলি ছোড়ে পুলিশ। তাতে দু’জন জখম হয়েছেন বলে দাবি করেন রাজ্য পুলিশের ডিজি। সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, যারা ‘বদমায়েশি’ করছে, তাদের রেয়াত করা হবে না। কঠোর থেকে কঠোরতম পদক্ষেপ করা হবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি।