মুর্শিদবাদে যে হিংসার ঘটনা ঘটেছে তার পিছনে আছে গভীর ষড়যন্ত্র। পূর্বপরিকল্পিত এই হিংসা নামিয়ে আনা হয়েছে জেলায়। বিএসএফ বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতী ঢুকিয়ে এপারে গোলমাল পাকিয়েছে। টাকা দিয়ে ইট ছোঁড়ার কাজ করানো হয়েছিল। কাদের হাত করে এই কাজ করা হয়েছে সেটা তদন্ত করে দেখা হবে। কাউকে ছাড়া হবে না। এই প্রি–প্ল্যান্ড কমিউনাল রায়টের নেপথ্যে আছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আজ এই দাবি করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর অশান্তি সৃষ্টি যারা করেছে তাদের কাউকে রেয়াত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম। আর আজ, বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পরই এবার মুর্শিদাবাদে হিংসার ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করল রাজ্য় পুলিশ।
এদিকে তিনজন মারা গিয়েছে হিংসার বলি হয়ে। বিএসএফও গুলি চালিয়েছে। আজ এই অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরই ৯ সদস্যের এই সিট গড়ে তোলা হল। যার নেতৃত্ব থাকবেন আইবি’র এসপি পদমর্যাদার এক অফিসার। মুর্শিদাবাদ কাণ্ডে সমস্ত মামলার তদন্ত করবে এই সিট। ওয়াকফ আইন সংশোধনের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছিল মুর্শিদাবাদ। সেখানের নানা জায়গায় চলে বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ। তবে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন। বাজারহাট, দোকানপাঠ খুলেছে। এই আবহে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে গঠিত হচ্ছে বিশেষ তদন্তকারী দল। যেখানে রয়েছেন ৯জন অফিসার। অ্যাডিশনাল এসপি ছাড়াও এই টিমে আছেন তিনজন ডেপুটি সুপার এবং ছ’জন ইনস্পেক্টর বলে সূত্রের খবর।
অন্যদিকে ইন্টারনেট পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। এই আবহে আজ মুখ্যমন্ত্রী কড়া বার্তা দিয়েছেন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সভা থেকে। মুর্শিদাবাদের হিংসা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইমামদের সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধানের ২৬ ধারায় যে কোনও ধর্মের মানুষকে তাদের ধর্ম পালনের অধিকার দেওয়া হয়েছে। তাদের সম্পত্তি অর্জন ও রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার দেওয়া হয়েছে। আপনি সেই অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন। রাম রহিমের অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন। এটা কি আপনার এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে? কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আমার বক্তব্য, আপনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানেন না? বাংলা হল বাংলাদেশ এবং নেপালের বর্ডার। আপনি ইউনুসের সঙ্গে গোপন মিটিং করুন। দেশের ভাল হলে খুশি হব। কিন্তু আপনাদের পরিকল্পনাটা কী? কোনও এজেন্সির মাধ্যমে ওখান থেকে লোক এনে এখানে দাঙ্গা করা? আমি সব কিছু তদন্ত করবো।’
এছাড়া পুলিশ সূত্রে খবর, রাজ্য পুলিশ, জেলা পুলিশ এবং এসটিএফ, সিআইডি আর রাজ্যের গোয়েন্দা দফতরের সদস্যদের নিয়ে ৯জনের এই টিম গঠন করা হয়েছে। তাঁরা মুর্শিদাবাদের প্রত্যেকটি হিংসার ঘটনার তদন্ত করবে। ইতিমধ্যেই রাজ্যে টিম পাঠানোর কথা জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও মহিলা কমিশন। কলকাতা হাইকোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। এই আবহে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘কাল এএনআইয়ের একটা ট্যুইট দেখলাম। সেখানে হোম মিনিস্ট্রিকে কোট করে বলা হয়েছে গোলমালে বাংলাদেশের হাত রয়েছে। হাত যদি থাকে তাহলে তার দায় তো কেন্দ্রের এবং তাহলে আপনারা কী করছিলেন। কেন বাইরে থেকে লোক এসে এখানে গোলমাল করে চলে গেল? কেন অ্যালাউ করলেন? কৈফিয়ত আপনাকে দিতেই হবে। এটা হল পূর্ব পরিকল্পিত দাঙ্গা। অনেক খবর পাচ্ছি। এই নিয়ে তদন্ত করব।’