যাদবপুরে গত শনিবারের (১ মার্চ, ২০২৫) ঘটনা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে রুজু হওয়া জনস্বার্থ মামলাগুলির জেরে আদালতের একাধিক পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশ সামনে এল বুধবার (৫ মার্চ, ২০২৫)।
একদিকে, বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বেঞ্চ প্রশ্ন তুলল রাজ্যের ভূমিকা, পুলিশের ‘একপেশে তদন্ত’, রাজ্যের গোয়েন্দাদের ‘ব্যর্থতা’ এবং রাজ্যের মন্ত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে। অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দিল, পঠনপাঠন বন্ধ থাকার বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। সেটা রাজ্যের দায়িত্ব।
বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে হওয়া মামলা:
অভিযোগ, গত শনিবারের বিশৃঙ্খলার সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ির দ্বারাই গুরুতর আহত হন ইন্দ্রানুজ রায়-সহ দুই ছাত্র। গোটা ঘটনার জেরে আঘাতপ্রাপ্ত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও। সেই সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলায় রাজ্যের রিপোর্ট তলব করলেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।
তাঁর পর্যবেক্ষণ, এই গোটা ঘটনায় রাজ্যের ভূমিকা ‘অভিভাবকের মতো’ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু, ইন্দ্রানুজ এই ঘটনায় তাঁর বয়ান দেওয়ার পরও তার ভিত্তিতে রাজ্য সরকার কোনও এফআইআর দায়ের করেনি। বিচারপতির প্রশ্ন, কেন এমন আচরণ করা হল রাজ্যের তরফে?
অন্যদিকে, পুলিশ যাদবপুর কাণ্ড নিয়ে যে তদন্ত করছে, তা ‘একপেশে’ বলেও ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি ঘোষ। কেন সেক্ষেত্রেও রাজ্য হস্তক্ষেপ করল না, তাও জানতে চেয়েছেন বিচারপতি।
এর পাশাপাশি তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের একজন মন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে। কেন ওই মন্ত্রীর সঙ্গে সাদা পোশাকের পুলিশ থাকল না, কেনই বা রাজ্যের গোয়েন্দা বিভাগ আগে থেকেই এই বিশৃঙ্খলা আঁচ করতে পারল না, কোথায় ও কীভাবে ব্যর্থ হলেন গোয়েন্দারা, তাও জানতে চেয়েছে আদালত। গোটা বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার, পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।
তাঁর নির্দেশ, আহত ছাত্রের বয়ান অনুসারে, রাজ্য সরকারকে এফআইআর করতে হবে। এবং বিচারপতি নিজে যে প্রশ্নগুলি এই মামলায় তুলেছেন, তার জবাব দিয়ে আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে হবে। এই মামলাটির পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ১২ মার্চ।
প্রধান বিচারপতির এজলাসে হওয়া মামলা:
গত শনিবারের গন্ডগোলের পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন শিকেয় উঠেছে। ফের যাতে সেখানে পড়াশোনা শুরু হয়, সেই বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা রুজু করা হয়েছিল। গত শনিবারই এই মামলা রুজু করা হয়। যার শুনানি হওয়ার কথা আগামিকাল (৬ মার্চ, ২০২৫)। কিন্তু, বুধবারই সেই মামলাটি নিয়ে ফের আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্য়ায়ের বেঞ্চ বুধবার সাফ জানিয়ে দেয়, আইনজীবী অর্ক নাগের রুজু করা সেই মামলার জরুরি শুনানি সম্ভব নয় (আবেদনকারী মামলার জরুরি বা দ্রুত শুনানি চেয়েছিলেন)।
আদালত আরও জানায়, রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নিজস্ব আইন থাকে এবং বিশেষ প্রয়োজনে রাজ্যও হস্তক্ষেপ করতে পারে। তাদের সেই বিশেষ অধিকার আছে। কাজেই এই মামলাটির ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্ট কোনও হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। যা করার রাজ্যকেই করতে হবে। এবং রাজ্যের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেওয়ার দায় কলকাতা হাইকোর্টের নেই।
পাশাপাশি, প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এও জানায়, যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে থাকে, তাহলে সেটা সামাল দেওয়ার কাজ পুলিশ প্রশাসনের।
মামলাকারী আইনজীবী এক্ষেত্রে আদালতকে জানান, একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল জোর করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। তার উত্তরেও প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলে, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়। প্রয়োজনে রাজ্য সরকার এক্ষেত্রে আইনানুগ পদক্ষেপ করতে পারে।