অফিসে কাজের ফাঁকেই শৌচালয়ে যাওয়ার জন্য ‘টয়লেট ব্রেক’ নিতেন কর্মীরা। আর সেই সময়েই গোপনে তাঁদের ছবি তুলে রাখত কর্তৃপক্ষ। পরে সেই ছবি সর্বসমক্ষে প্রকাশ করে দেয় তারা! ঘটনার জেরে নেটিজেনদের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে চিনের ওই সংস্থা।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, যে কর্মীরা একটু লম্বা সময়ের জন্য টয়লেট ব্রেক নেন, তাঁদের যাতে সকলের সামনে লজ্জিত করা যায়, তার জন্যই নাকি এই বন্দোবস্ত করেছিল সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি। অভিযুক্ত লিক্সান দিয়ানশ্নেগ নামক সংস্থাটি চিনের গ্যাংডং প্রদেশের শেনঝেন এলাকায় অবস্থিত।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া-এ এই সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সেই অনুসারে – সংশ্লিষ্ট সংস্থার দাবি ছিল, কর্মীদের একটা অংশ শৌচালয় যাওয়ার নাম করে আদতে দীর্ঘ সময় ধরে ধূমপান করেন অথবা শৌচালয়ে বসে মোবাইল গেম খেলেন। এতে কাজের সময় নষ্ট হয়। সেই কারণেই তাঁদের শৌচালয়ে বসে থাকার ছবি প্রকাশ করা হয়েছে!
সংস্থারই অন্য কর্মীরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মই বেয়ে উঠে শৌচালয়ের উপরের ফাঁকা অংশ দিয়ে ক্যামেরা বা মোবাইল ঢুকিয়ে সহকর্মীদের শৌচালয়ের ভিতরে থাকা অবস্থায় ছবি তুলতেন! গত, ২০ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় তুমুল সমালোচনা শুরু হতেই আত্মপক্ষ সমর্থনে নানা যুক্তি খাড়া করে লিক্সান দিয়ানশ্নেগ কর্তৃপক্ষ। তাদের মতে, কর্মীরা যাতে এই ধরনের আচরণ ভবিষ্যতে আর না করেন, তার জন্যই এই ধরনের পদক্ষেপ করা হয়েছে।
এমনকী, সংস্থার কর্মীরা যাতে শৌচালয়ে গিয়ে ধূমপান করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে নিজেদের পলিসি বা নীতিতেও সংস্কার সাধন করেছে লিক্সান দিয়ানশ্নেগ কর্তৃপক্ষ। যদিও পরবর্তীতে ওই ছবিগুলি সরিয়ে দেয় তারা। কারণ তাদের মনে হয়েছে, ওই ছবিগুলি ‘দেখতে ভালো লাগছিল না’!
প্রসঙ্গত, এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা এবং সমালোচনা তখনই শুরু হয়, যখন এই পুরো বিষয়টি অনলাইনে ফাঁস হয়ে যায়। নেট নাগরিকরা প্রায় সকলেই লিক্সান দিয়ানশ্নেগ কর্তৃপক্ষের এই আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানান। এমনকী, আইনজ্ঞরাও এ নিয়ে মুখ খোলেন ও ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেন।
সমালোচক ও আইনজ্ঞদের বক্তব্য় ছিল, ওই চিনা সংস্থা যে কাজ করেছে, তা আদতে একজন মানুষের ব্যক্তিগত অধিকারে হস্তক্ষেপ এবং তাঁর মর্যাদাহানির সমতুল্য। যা মোটেও আইনসম্মত কোনও আচরণ হতে পারে না। বরং, অনৈতিক, অমানবিক এবং বেআইনি।
এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সেলু ল ফার্মের আইনজীবী ঝু জিউ চিনা সংবাদমাধ্যমকে স্পষ্ট জানান, ওই সংস্থা যে কাজ করেছে, তা সম্পূর্ণ বেআইনি। কর্মীরা কোনও অন্য়ায্য কাজ করছেন, এই অভিযোগ তুলে কর্তৃপক্ষ কখনই কর্মীদের সেই আচরণ বেআইনি কোনও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রেকর্ড করতে পারে না।
প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে আমজনতার গলাতেও। কেউ বলছেন, আসলে ওই সংস্থার আইন সম্পর্কে কোনও জ্ঞানই নেই। কেউ আবার বলছেন, ওই সংস্থা কর্মীদের ক্রীতদাস মনে করে।