আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চুলচেরা বিশ্লেষণের সময় বিশেষজ্ঞদের প্রায়শই বলতে শোনা যায় যে, বড় খেলোয়াড় তিনিই, যিনি পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে মেলে ধরতে পারেন। দলের প্রয়োজন অনুযায়ী নিজের খেলা বদলাতে না পারলে ম্যাচ উইনার হওয়া যায় না। সেই নিরিখে মঙ্গলবার দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিরাট কোহলি(Virat Kohli) আরও একবার প্রমাণ করলেন, কেন তিনি বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারের তকমা পান। এটাও বোঝা যায়, চেজ মাস্টার তকমা অকারণে দেওয়া হয়নি তাঁকে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হাই-ভোল্টেজ ম্যাচের চাপ সামনে বিরাট লড়াকু শতরান করেন। রান তাড়া করতে নেমে ৭টি বাউন্ডারির সাহায্য ১১১ বলে অপরাজি ১০৭ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করেন কোহলি। এবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালেও কার্যত একই মেজাজের ক্রিকেট খেলেন বিরাট। তিনি ৯৮ বলে ৮৪ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলার পথে মাত্র ৫টি চার মারেন।
একদিকে যেমন লোকেশ রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া বড় শটে বাজিমাতের চেষ্টা করেন, কোহলি ছিলেন আগাগোড়া ধীর স্থির। আসলে বিরাটের লক্ষ্য ছিল দলের জয়, ব্যক্তিগত পারফর্ম্যান্সে গ্যালারি মাতানো নয়। ভারতের জয়ের পরে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার নিয়ে কোহলি জানালেন নিজের গেমপ্ল্যানের কথা। তাঁর দাবি, ৫-৬ ওভার বাকি থাকতে যদি বলের থেকে ২০-৩০ রানের তফাৎও থাকে, তাহলেও বিচলিত হন না তিনি। কেননা তিনি জানেন যে, হাতে উইকেট থাকলে এমন পরিস্থিতি থেকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়া বিশেষ অসুবিধার হয় না। যদিও অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে তেমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি ভারতকে।
বিরাট বলেন, ‘পাকিস্তান ম্যাচের মতো একই পরিস্থিত ছিল। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করা এবং সেই মতো নিজের খেলাকে সাজানো। ক্রমাগত প্রান্তবদল করাই ছিল লক্ষ্য, কেননা এই পিচে পার্টনারশিপ গড়ে তোলা দরকারি ছিল। যে সময় আমি আউট হই, বোধহয় ২০-৩০ রান বাকি ছিল। চাইছিলাম ওভার দু’য়েকে ম্যাচ শেষ করে দিতে। তবে সব সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজেকে প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না।’
বিরাট পরক্ষণেই বলেন, ‘পাকিস্তান ম্যাচে সেঞ্চুরি করি ৭টি বাউন্ডারি মেরে। এই ম্যাচেও লক্ষ্য ছিল পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করা। সেই মতোই ইনিংসকে টেনে নিয়ে গিয়েছি। আমি শুধু বল ঠেলে এক রান নিয়েই খুশি ছিলাম। কোনও তাড়াহুড়ো ছিল না। একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনি যখন বল নিখুঁতভাবে গ্যাপে ঠেলে এক রান নিয়েও খুশি হন, তখন বুঝে যাওয়া উচিত যে, আপনি ভালো ক্রিকেট খেলছেন। কেননা আপনি বোঝেন যে, বড় পার্টনারশিপ গড়তে পারছেন। আমি জানি যে, ম্যাচ গভীরে টেনে নিয়ে গেলে প্রতিপক্ষ দল চাপে পড়ে যায়। তখন কাজ আরও সহজ হয়ে দাঁড়ায়। এই পিচে পার্টনারশিপ গড়াটা সেই কারণেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
কোহলি আরও যোগ করেন, ‘আমার কাছে গুরুত্ব পায় কত ওভার বাকি আছে আর কত রান দরকার, সেই বিষয়টা। যদি ৫-৬ ওভার বাকি থাকতে ২০-৩০ রানের তফাৎ হয়ে যায়, ৬-৭ উইকেট হাতে থাকলে আমি কখনও উদ্বিগ্ন হই না। কেননা হাতে উইকেট থাকলে দু-এক ওভারেই ব্যবধান কমিয়ে ফেলা যায়।’
ব্যক্তিগত পারফর্ম্যান্সের প্রসঙ্গে কোহলি বলেন, ‘আমি কখনই মাইলস্টোনের দিকে তাকিয়ে মাঠে নামি না। দল জিতলে নিজেকে গর্বিত মনে করি। তিন অঙ্কের রান এলে ভালো, না এলেও কিচ্ছু যায় আসে না। সেরা ছন্দে রয়েছি কিনা, সেটা বিচার করা আপনাদের কাজ। এই নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’