তৃণমূল কংগ্রেসের ‘ভূত’ তাড়ানোর কৌশল নির্ধারণের প্রথম বৈঠকে নেওয়া একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্থগিত হয়ে গেল! কারণ, তাতে নাকি স্বয়ং দলের সুপ্রিমোর কিছু আপত্তি রয়েছে।
কী সেই আপত্তি? টিভি নাইন বাংলা-র অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, জেলায় জেলায় ভোটার তালিকা থেকে ‘ভূতুড়ে’ বা ভুয়ো ভোটার খুঁজে বের করার জন্য জেলাস্তরে যে কোর কমিটিগুলি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেই প্রক্রিয়া তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে হাতেই সারতে চান। তাই, আপাতত জেলাভিত্তিক কমিটিগুলি গড়ার প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেল বলেই মনে করা হচ্ছে।
কীভাবে এগোল ঘটনাক্রম?
সম্প্রতি কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত দলীয় কর্মসূচিতে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় ‘ভূতুড়ে’ বা ভুয়ো ভোটারের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে সরব হন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তথ্য ও পরিসংখ্যাব তুলে ধরে তাঁর অভিযোগ ছিল, দিল্লি ও মহারাষ্ট্রের মতোই বাংলাতেও ভোটার তালিকায় গরমিল করছে বিজেপি। নির্বাচন কমিশনের মদতে ভোটার তালিকায় বিজেপি সমর্থকদের ভুয়ো ভোটার হিসাবে জুড়ে দিচ্ছে তারা।
সেদিনের সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই ৩৬ জনের একটি কোর কমিটি গড়ে দেন মমতা। ঠিক করা হয়েছিল, এই কোর কমিটিই ভুয়ো ভোটার খুঁজে বের করার বিষয়ে কাজ করবে। সেই মোতাবেক, আজ (বৃহস্পতিবার – ৬ মার্চ, ২০২৫) কলকাতার তৃণমূল ভবনে ওই কমিটির প্রথম বৈঠক হয়। যে বৈঠকের নেতৃত্বে ছিলেন মমতার আস্থাভাজন হিসাবে পরিচিত, তথা দলের প্রবীণ নেতা সুব্রত বক্সী।
সেই বৈঠকেই স্থির করা হয়, প্রত্যেকটি জেলার জন্য আলাদা করে এক-একটি কমিটি গড়ে তোলা হবে। এবং এক-একটি কমিটিতে কম করে ১১ জন সদস্য থাকবেন। তাঁরা তাঁদের জেলায় ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করবেন। এবং রাজ্যের কোর কমিটিকে সেই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করবেন।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, এদিনের এই প্রথম বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় উপস্থিত ছিলেন না। যা নিয়ে শুরু থেকেই বিস্তর জলঘোলা হয়।
সূত্রের দাবি ছিল, আগামী ১৫ মার্চ আলাদা করে বৈঠক করবেন অভিষেক এবং সেই বৈঠকে কোর কমিটির সদস্যরা ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবেন। সেই বৈঠকে জেলাগুলি থেকে আসা রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হবে এবং তারপর সেই তথ্য তৃণমূল সুপ্রিমোকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
এর পাশাপাশি, কীভাবে ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করতে হবে, তার জন্য পঞ্চমুখী রণকৌশলও তৈরি করা হয়েছিল এদিনের এই প্রথম বৈঠকে। কিন্তু, এখন শোনা যাচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই বিষয়ে যেখানে যা কমিটি গঠন করা হবে, তা তিনি নিজেই তৈরি করে দেবেন।
অর্থাৎ – যতক্ষণ মমতা সেই কমিটি তৈরি না করছেন, ততক্ষণ পঞ্চমুখী রণকৌশল অনুসারে জেলায় জেলায় ভূতুড়ে ভোটার খোঁজার প্রক্রিয়া চলবে কিনা, সেটা স্পষ্ট নয়। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি এই প্রেক্ষাপটে আগামী ১৫ মার্চ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় তাঁর বৈঠকটি করবেন? নেতানেত্রীরা যোগ দেবেন তাতে? উপরন্তু, মমতা হঠাৎ করে তাঁরই গড়ে দেওয়া কোর কমিটির সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দিলেন কেন, সেটাও স্পষ্ট নয়।