বিশেষ শ্রেণীর মানুষকে মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না! অন্যদের দাবি, ওই শ্রেণীর মানুষ নাকি ‘নিচু জাত’-এর। ফলে তাঁদের মন্দিরে ঢোকার অধিকার নেই। একবিংশ শতকেও এমন ঘটনা ঘটছে। এবার ঘটনাস্থল এমন এর রাজ্য, যেখানে জাতপাতের বিভেদের পরিমাণ কম বলেই অনেকে মনে করেন। সেই পশ্চিমবঙ্গেই এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতিও তৈরি হয়। শেষমেশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শান্ত হয় এলাকা। অভিযোগ, এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার গীধগ্রামে।
আনন্দবাজার অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো একটি শিব মন্দির রয়েছে বর্ধমানের কাটোয়ার গীধগ্রামে। নাম গীধেশ্বর শিব মন্দির। সেখানেই নাকি ঘটেছে ঘটনাটি। শিবরাত্রি উপলক্ষে সেখানে শিবের গাজন বসে, উৎসব হয়। কিন্তু, তাতে সার্বিকভাবে সামিল হতে পারেন না কিছু মানুষ। অভিযোগ, তাঁদেরকে ‘নিচু জাতের মানুষ’ বলে অসম্মান করা হয় এবং মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয় না! পুজো দেওয়ারও কোনও সুযোগ তাঁরা পান না।
অভিযোগ, এভাবেই এলাকার ১০০টিরও বেশি পরিবারকে তাঁদের আরাধ্যের আরাধনা থেকে বাধা দিচ্ছেন তথাকথিত ‘উঁচু জাতের লোকজন’ বা গ্রামের মাতব্বররা। এবার শিবরাত্রির আগে এ নিয়ে কাটোয়া মহকুমা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান বঞ্চিতরা। দাবি করেন মন্দিরে ঢুকে পুজো করার সমানাধিকারের।
এরপর কাটোয়ার মহকুমাশাসকের উদ্যোগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে মহকুমা পুলিশ আধিকারিক, মন্দির কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি এবং অভিযোগকারীদের প্রতিনিধিরাও যোগ দেন। সকলে সহমত হন যে ঈশ্বরের আরাধনা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না। তাই সকলেই ওই মন্দিরে পুজো করার সমানাধিকার পাবেন।
কিন্তু, এই বৈঠকের পরও সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর ভক্তদের মন্দিরের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এমনকী, তাঁরা পুজো দিতে গেলে মন্দিরের ফটকের তালা পর্যন্ত খোলা হয়নি!
যদিও মন্দির কর্তৃপক্ষের পালটা দাবি, প্রতিদিন গর্ভগৃহ খোলার নির্দিষ্ট নিয়ম ও সময় রয়েছে। এই নিয়ম শত-শত বছর ধরে পালন করা হচ্ছে। কিন্তু, অভিযোগকারীরা অসময়ে এসে মন্দিরের দরজা খুলতে বলেন, সেটা সম্ভব নয়।
অন্যদিকে, এই মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফেই আবার প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যে চিঠির মোদ্দা কথা হল, কেবলমাত্র একটি গোষ্ঠীর মানুষ, বর্ণাশ্রমের নিরিখে যাঁরা তথাকথিতভাবে বাকি সব মানুষের থেকে ‘উঁচু জাত’, তাঁরা ছাড়া কারও নাকি মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢোকার অনুমতি নেই। এটাই নাকি গত ৩৫০ বছরের নিয়ম।
অথচ, লক্ষ্যণীয় বিষয় হল – মন্দিরের যত কাজকর্ম, মন্দিরের যত প্রয়োজন পূরণ, সেসব কিন্তু এই তথাকথিত উঁচু জাতের মানুষরা পালন করেন না। তাঁরা শুধু গর্ভগৃহে ঢুকে পুজো করেন। এভাবেই নাকি ৩৫০ বছর আগে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে কাজ ও দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল! আর গ্রামবাসীর একাংশও নাকি চান, এই নিয়ম অব্যাহত থাকুক!
কিন্তু, ইদানীংকালে এ নিয়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। আর সেই কারণেই শুক্রবার এবং শনিবার দুই গোষ্ঠীর মধ্য়ে সংঘাত ঘটেছে। যদিও পুলিশ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এলাকা শান্ত করা গিয়েছে।
প্রশাসনের বক্তব্য হল, এসব ক্ষেত্রে শুধু আইন দিয়ে কিছু হয় না। মানুষকে সচেতন ও সুশিক্ষিত করে তোলা দরকার। সেটা করা সম্ভব হলেই সমস্ত বিভেদ ঘুচে যাবে।