ভরা বসন্ত এখন বঙ্গে। গাছের পাতা হলুদ হয়ে গিয়েছে। মাঝেমধ্যে হালকা ঠাণ্ডা হাওয়া শরীরে পরশ দিয়ে যাচ্ছে। পলাশ আর শিমুল পথে বিছিয়ে রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জায়গার মতোই শান্তিনিকেতনের পরিবেশ এখন এরকমই। বসন্তের মৃদু হাওয়ার সঙ্গে দোল, রঙের খেলা, পলাশফুলের গন্ধ ভেসে আসতেই মনে পড়ে যায় শান্তিনিকেতন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে রতনপল্লি, সোনাঝুরির হাট, শ্যামবাটী, জামবুনি–সহ নানা জায়গাতেই এখন বসন্ত উৎসব পালিত হয়। হাতে বেশি সময় নেই। আগামী সপ্তাহে দোল। আর এই বসন্ত উৎসব মানেই বহু বাঙালি ছুটে যায় শান্তিনিকেতনে। খোয়াই, সোনাঝুরির হাট–সহ নানা জায়গায় উৎসবে মেতে ওঠে বাঙালি। তবে বন দফতরের নিষেধাজ্ঞায় এই বছর বসন্ত উৎসব হচ্ছে না শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি খোয়াইয়ের হাটে।
এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই অনেকের মন ভেঙে গিয়েছে। শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি খোয়াইয়ের হাটে বন দফতরের নিষেধাজ্ঞা থাকার জন্য এই বছর হচ্ছে না বসন্ত উৎসব। দোল পূর্ণিমার দিন সেখানে পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রবেশাধিকার থাকলেও রঙ খেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ২০১৯ সালের পর থেকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুধু ঘরোয়াভাবে বসন্ত উৎসব পালন করছে। সেখানে বহিরাগতদের প্রবেশাধিকার থাকে না। তাই বোলপুর এবং শান্তিনিকেতনের নানা এলাকায় পৃথকভাবে বসন্ত উৎসব পালন করা হয়। গত কয়েক বছর ধরে বোলপুর বন দফতরের অন্তর্গত সোনাঝুরি জঙ্গলে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে বসন্ত উৎসব পালিত হয়েছে।
সেখানে এবার তা হচ্ছে না। ইতিমধ্যেই এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই অন্যান্য জায়গা থেকে যেসব পর্যটক শান্তিনিকেতনে যাওয়ার জন্য টিকিট কেটে ছিলেন তা বাতিল করতে শুরু করেছেন। বোলপুর বন দফতরের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর তাই শান্তিনিকেতনে ঘুরতে আসা পর্যটকদের মন এখন ভারাক্রান্ত। তবে হাটের ব্যবসায়ীরা বন দফতরের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। বোলপুর বনদফতর সূত্রে খবর, জঙ্গল এলাকায় বিপুল মানুষের যাতায়াত এবং রঙ খেলার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গাছ। প্রচুর সংখ্যক গাড়ি আসায় পার্কিং করতে গিয়েও বন দফতরের জমি ও গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া অনেক পর্যটকই সোনাঝুরির জঙ্গলে দোল খেলবেন বলে একপ্রকার পরিকল্পনা করে ফেলেছিলেন। তাতে এবার জল ঢেলে দিল বন দফতর। তাই এখন শান্তিনিকেতন থেকে ফিরে আসছেন পর্যটকরা। এবার খুব ভাল ছুটি পড়েছিল। একসঙ্গে তিনদিন ছুটি পাওয়া যাচ্ছিল। যেহেতু শনিবার এবং রবিবার পড়ে গিয়েছে। কিন্তু দোল খেলতে পারা যাবে না বলে ছুটি অন্যত্র কাটাতে চাইছেন পর্যটকরা। ফলে ব্যবসায়ীদের বেশ অনেক টাকার ক্ষতি মেনে নিতে হবে।