পঞ্চায়েত প্রধানের আত্মীয়ের সঙ্গে নাবালিকার বিয়ে

Spread the love

বিজেপির পঞ্চায়েত প্রধানের আত্মীয়। আর তার সঙ্গেই নাবালিকার বিয়ে হয় বলে ওঠে অভিযোগ। কিন্তু এই খবর মেলার পর পুলিশ যে ভূমিকা পালন করেছে তা নিয়ে উঠল বিস্তর বিতর্ক। কারণ পুলিশ বিয়ে আটকেছে ঠিকই। কিন্তু এই অপরাধে গ্রেফতার করার পরিবর্তে দু’ পক্ষকে থানায় নিয়ে এসে স্রেফ ‘মুচলেকা’ লিখিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁদের বলে অভিযোগ। নদিয়ার ধানতলা থানার পুলিশের এই ভূমিকায় এখন বিতর্ক চরমে উঠেছে। এই গোটা ঘটনা নিয়ে রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন বলছে, নাবালিকা বিয়ের ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপ করা উচিত। সেখানে মুচলেকার কোনও জায়গাই নেই। কেমন করে অভিযুক্তদের ছাড়ল পুলিশ?‌ উঠছে প্রশ্ন।

এদিকে গত সোমবার এই ঘটনা ঘটলেও তা চেপে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এখন তা প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। ধানতলা থানা এলাকার বাসিন্দা ১৯ বছরের যুবক সজল বিশ্বাসের সঙ্গে বিহারের নিবাসী নাবালিকার বিয়ের ব্যবস্থা হয় স্থানীয় মন্দিরে। ওই নাবালিকার মামার বাড়ি ধানতলা এলাকায়। তখন নাবালিকার এই বিয়ের খবর পৌঁছে যায় পুলিশের কাছে। মন্দির থেকে পুলিশ দু’পক্ষকে তুলে নিয়ে আসা হয় ধানতলা থানায়। নাবালিকার বিয়ে আটকে যায়। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ‘‌মুচলেকা’‌ লিখিয়ে নিয়েই তাঁদের সকলকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে খবর, থানা থেকে ছাড়া পেয়েই ওই নাবালিকাকে নিজের বাড়িতে ওঠে সজল। বুধবার ছেলের বাড়িতে বিয়ের পরের অনুষ্ঠান করা হয়।

অন্যদিকে তরুণ সজল বিশ্বাস স্থানীয় কামালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির প্রধান বুলু অধিকারীর আত্মীয় বলে সূত্রের খবর। এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই গোটা বিষয়টিতে অঙ্গুলিহেলন করার অভিযোগ উঠেছে। যদিও সজলের পরিবারের সঙ্গে বিজেপির প্রধানের কোনও সম্পর্ক নেই বলেই দাবি করেছেন বুলু অধিকারী। কিন্তু পুলিশ কেন ‘‌মুচলেকা’‌ নিয়ে ছেড়ে দিল?‌ উঠছে প্রশ্ন। যদিও পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় ওই নাবালিকা নিজের বাড়িতেই আছে। ছেলের বাড়ির পক্ষ থেকে বিয়ের আয়োজন করা হচ্ছিল বলে স্বীকার করা হয়নি। এই বিষয়ে রানাঘাট জেলা পুলিশের ডিসপি (সীমান্ত) সোমনাথ ঝাঁ বলেন, ‘‌আমরা একটি জেনারেল ডায়েরি করেছি। গোটা ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। ওই তদন্তে যা তথ্য উঠে আসবে সেটা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’‌

এছাড়া এই ঘটনা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় সংবাদমাধ্যমে সজলের মা রেখা বিশ্বাস বলেন, ‘‌ছেলে ভুল করেছে। তাই আমরা ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু পরে যখন জানতে পারলাম মেয়ের ১৮ বছর হয়নি তখন পুলিশের কথা মতো থানায় ‘‌মুচলেকা’‌ দিয়েছি।’‌ তবে রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‌ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। আইন অনুযায়ী, আইনি পদক্ষেপ করতে হবে দুই পরিবারের বিরুদ্ধে। কারও ছাড় পাওয়ার কথা নয়। পুলিশ কোনওভাবেই আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে ছাড়তে পারে না।’‌

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *