Non-veg Fatwa in Nabadwip। দোলে আমিষ না খাওয়ার ‘অনুরোধ’ করেছিলেন পুরপ্রধান

Spread the love

দোল উৎসব ও হোলির সময় টানা তিনদিন নবদ্বীপবাসীকে আমিষ খাবার বর্জন করার ‘অনুরোধ’ করেছিলেন স্থানীয় পুরসভার চেয়ারম্যান বিমানকৃষ্ণ সাহা। তাঁর দাবি ছিল, এই ‘অনুরোধ’ তিনি ‘পুরসভার হয়ে’ করছেন! যদিও সংবিধান তাঁকে এভাবে সহনাগরিকদের ব্যক্তিগত পরিসরে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের অনুমতি দেয় কিনা, তার ব্যাখ্যা বিমানকৃষ্ণ দেননি। বরং, দাবি করেছিলেন, নবদ্বীপের মানুষ তাঁর এই ‘অনুরোধ’ই নাকি ‘আইন’-এর মতো মান্য করবে!

এখন কথা হল, বাঙালিকে জাতি হিসাবে বরাবরই মুক্ত চিন্তার প্রতীক বলে মনে করা হয়। উপরন্তু, অধিকাংশ উৎসবেই সামর্থ্য অনুসারে বাঙালি বাড়িতে আমিষ পদ রান্না করা হয়। আবার একথাও ঠিক যে বিশেষ কিছু পুজো-পার্বণে বাঙালি চুটিয়ে নিরামিষ খাবারও খায়। কিন্তু, বাঙালির উপর ‘আমিষ খাবেন না’ জাতীয় ফতোয়া জারির চল, তাও আবার এক বাঙালির তরফে বড় একটা দেখা যায় না।

উপরন্তু, প্রথম থেকেই ‘তৃণমূল নেতা’ বিমানকৃষ্ণের ‘অনুরোধ’ নিয়ে যে হারে সমালোচনা শুরু হয়েছিল, তাতে নানা মহলের কৌতূহল ছিল এটা দেখার যে দোলের তিনদিন নবদ্বীপবাসী কী করে!

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তা নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শের প্রতীক, শ্রী চৈতন্যের মাটির বাসিন্দারা কেউই কোনও বিবাদে যাননি। তাঁরা তাঁদের খাদ্যাভ্যাস বজায় রেখেছেন নিজেদের মতো করেই। যাঁর ইচ্ছা হয়েছে, নিরমিষ খেয়েছেন। আবার, যাঁর ইচ্ছা হয়েছে জমিয়ে আমিষ বিরিয়ানি সাঁটিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমের হাতে আসা তথ্য অন্তত তেমনই বার্তা দিচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী, বাজারের বিক্রেতা, হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গিয়েছে, সাধারণত – মূল দোল উৎসবের দিন নবদ্বীপের বহু মানুষই মাছ, মাংস খান না। তাই, মাছ বা মাংসের বাজারে তেমন বিকিকিনিও হয় না। ফলত, ওই দিন এমনিতেই বাজার বন্ধ থাকে। এবারও সেই পুরোনো অভ্যাসের কোনও ব্যতিক্রম হয়নি। অর্থাৎ – এক্ষেত্রে পুরপ্রধানের ‘অনুরোধ’ তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ নয় বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

এছাড়া, দোল উৎসবের সময় বহু জায়গাতেই খিচুড়ি ভোগ-সহ নানা ধরনের প্রসাদ বিলি করা হয়। আর, বাঙালি ভোগ প্রসাদের গন্ধে সেখানে পৌঁছবে না, ভক্তি ভরে সেই প্রসাদ খাবে না, তা কি হয়? হয় না। এবারও দোলের দিন এমন সব আয়োজন ছিল। তাই, মানুষ সেসব তৃপ্তি ভরেই খেয়েছে।

আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে নবদ্বীপের চারিচারাপাড়া বাজার পরিচালন কমিটির সম্পাদক অলোক দাস জানিয়েছেন, শুধুমাত্র দোলের দিন – অর্থাৎ গত শুক্রবার বাজারে মাছ-মাংস বিক্রি হয়নি। যদিও ব্যবসায়ীরা আগেই জানিয়েছিলেন, মানুষের চাহিদা ও বরাবরের নিয়ম মেনে দোলের আগের ও পরের দিন মাছ-মাংস বিক্রি হবে, এবং তা হয়েওছে, ও মানুষ তা কিনেওছে।

অন্যদিকে আবার নবদ্বীপেরই বাসিন্দা তথা ‘নাস্তিক মঞ্চ’ নামক একটি সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক প্রতাপচন্দ্র দাস দাবি করেছেন, দোলের দিন মূল মাছ-মাংসের বাজার বন্ধ থাকলেও অলি-গলিতে সেসব দিব্য বিকিয়েছে। তিনি নিজেও তা কিনেছেন। মাংস বিক্রেতারা তাঁদের বাড়ি থেকে ব্যবসা চালিয়েছেন।

আর বিরিয়ানি? যে বিরিয়ানি বাঙালির আবেগ? যেকোনও উৎসব আয়োজনে যাকে ছাড়া বাঙালির মন কেমন করে! দোলের দিন তার বিকিকিনি কেমন হল? স্থানীয় বিরিয়ানি বিক্রেতাদের উদ্ধৃত করে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অন্যান্য দিনের তুলনায় দোলের সন্ধ্যায় বিরিয়ানি বেশিই বিক্রি হয়েছে।’ আর যেহেতু ‘দোলের দিন বাজারে মাংস-মাছ বিক্রি হয় না। (তাই) যাঁরা সারাবছর মাংস সরবরাহ করেন, তাঁরাই সেদিন এসে দিয়ে (সেই কাঁচামাল) যান।’ বাকি বিরিয়ানি বিক্রেতারাও একই তথ্য দিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে।

যদিও এটাও ঠিক যে টাটকা মাছ ও মাংসের অভাবে ওই দিন অনেকেই তাঁদের রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। অর্থাৎ – সেদিন সেইসব রেস্তোরাঁয় আমিষ বা নিরামিষ – কোনও পদই বিকোয়নি।

যদিও দোলের দিন নবদ্বীপের বাঙালিকে আমিষ বর্জনের ‘অনুরোধ’ করা বিমানকৃষ্ণের দাবি, ‘সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে (তাঁর) আবেদনে সাড়া দিয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু হলে, সেটা আলাদা কথা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *