MEA on India-Canada Relation। ট্রুডো জমানায় ভারত-কানাডা সম্পর্ক ঠেকেছিল তলানিতে

Spread the love

কানাডার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি নিয়ে শুক্রবার বড় বিবৃতি দিল ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। দিল্লির তরফ থেকে বলা হয়, চরমপন্থী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অবাধ স্বাধীনতা দেওয়ার কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘চরমপন্থী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছাড় দেওয়ার কারণেই ভারত-কানাডা সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। আশা করি, পারস্পরিক আস্থা ও সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে আমরা সম্পর্ক পুনর্গঠন করতে পারব।’ উল্লেখযোগ্য ভাবে, অটোয়ায় নেতৃত্ব পরিবর্তনের পর ভারতের তরফ থেকে এই মন্তব্য করে কানাডার নয়া প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে বার্তা দেওয়া হয় বলে মনে করা হচ্ছে। মার্ক সম্প্রতি জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।

২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই জাস্টিন ট্রুডো তাঁর দলকে ক্রমশ বামপন্থার দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। বিগত দিনগুলিতে তিনি আবার ভারতের সঙ্গে কানাডার দ্বন্দ্ব বাঁধিয়েছিলেন। খলিস্তান নিজ্জর হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত এবং কানাডার সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বিগত কয়েক মাসে। কানাডার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো প্রথম থেকেই দাবি করে এসেছিলেন, খলিস্তানি জঙ্গি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর খুনে নাকি ভারতীয় যোগ আছে।

অবশ্য কানাডার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে মার্ক কার্নি দাবি করেছিলেন, তিনি দায়িত্বে এলে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করবেন। তিনি বলেছিলেন, ‘সমমনা দেশগুলির সাথে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্কের বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করব। এবং ভারতের সাথে সম্পর্ক পুনর্গঠনেরও সুযোগ রয়েছে।’

এদিকে যে নিজ্জর হত্যা নিয়ে এত কাণ্ড, সেই খুন নিয়ে সম্প্রতি কানাডার একটি কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছিল। তাতে দাবি করা হয়েছিল, ‘হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনে যে তোনও বিদেশি শক্তির যোগ থাকতে পারে এমন কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’ কানাডার গণতন্ত্রে বৈদেশিক হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত ১২৩ পাতার রিপোর্টে এই পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল বলে জানা যায়। হরদীপ সিং নিজ্জর খুনের ঘটনায় প্রথম থেকেই ভারতের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে আসছে কানাডা। তবে দিল্লিও দাবি করে এসেছে, এই মামলায় দিল্লির হাতে কোনও প্রমাণ তুলে দেয়নি জাস্টিন ট্রুডোর সরকার। এরই মাঝে এই মামলার জেরে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এই আবহে দিল্লির দাবি, রাজনৈতিক কারণেই ভারতের ঘাড়ে এই দোষ চাপাচ্ছেন ট্রুডো।

প্রসঙ্গত, নিজ্জর খুনের ঘটনায় প্রমাণ দেখতে চেয়েছিল ভারত। তা দেখানো হয়নি। রিপোর্ট অনুযায়ী, নিজ্জর খুনের পরে এনআইএ-র তরফ থেকে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের কাছ থেকে খলিস্তানি জঙ্গির ডেথ সার্টিফিকেট চাওয়া হয়েছিল। কানাডা সেই ডেথ সার্টিফিকেট দেখায়নি। বরং তারা উলটে প্রশ্ন করেছে, এই ডেথ সার্টিফিকেট ভারতের কেন চাই। তারা কার্যত বুঝিয়ে দেয় যে নিজ্জর খুন সংক্রান্ত তথ্য তারা ভারতকে দিতে নারাজ। উল্লেখ্য, ভারতে নিজ্জরের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা ছিল। এই আবহে আদালতের নথির রেকর্ডের খাতিরে সেই ডেথ সার্টিফিকেট চাওয়া হয়েছিল।

উল্লেখ্য, গত ২০২৩ সালের ১৮ জুন গুরুদ্বারের ভেতরেই গুলি করে হত্যা করা হয় খলিস্তানপন্থী জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরকে। হরদীপকে ২০ বারেরও বেশি গুলি করা হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের পঞ্জাবি অধ্যুষিত সারে অঞ্চলে থাকত হরদীপ। বিগত কয়েকবছরে কানাডার ভ্যানকুবারে ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে খলিস্তানি বিক্ষোভের নেপথ্যে ছিল এই হরদীপ। কানাডায় মৃত হরদীপের বিরুদ্ধে এনআইএ-র চারটি মামলা ছিল। এক হিন্দু পুরোহিতকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র সহ খলিস্তানি যোগের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এই আবহে হরদীপ নিজ্জরের মাথার দাম ১০ লক্ষ টাকা ধার্য করেছিল এনআইএ। জানা যায়, হরদীপ খলিস্তান টাইগার ফোর্সের প্রধান ছিল। গুরপতবন্ত সিং পান্নুনের ‘শিখস ফর জাস্টিস’ সংগঠনের মতাদর্শ প্রচারের দায়িত্ব ছিল হরদীপের টাইগার ফোর্সের ওপর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *