একদিকে যখন নবরাত্রি ও ইদ-উল-ফিতর চলাকালীন দেশের বেশ কিছু এলাকায় প্রশাসনের তরফে মাংস তথা আমিষ পণ্য বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা নিয়ে বিতর্ক চলছে, সেই প্রেক্ষাপটেই এবার ‘বিভাজনের রাজনীতি’ নিয়ে সরব হলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসওয়ান। তাঁর মতে, ধর্মকে কেন্দ্র করে যেভাবে বিভাজনের রাজনীতি করা হচ্ছে, তা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল – বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বাসভবনের এনডিএ-র বৈঠক হওয়ার পরই এই বিষয়টি নিয়ে সরব হন চিরাগ। তিনি এই গোটা ইস্যুতে নিজের হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সরাসরি বলেন, ধর্ম নিয়ে যে রাজনীতি করা হচ্ছে, তা আসলে ‘ফালতু আলোচনা’।
একইসঙ্গে, চিরাগ সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছে আবেদন করেন, যাতে তারা ধর্মবিশ্বাস ও সম্প্রদায়ভিত্তিক রাজনীতি করা থেকে নিজেদের বিরত রাখে।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে চিরাগ বলেন, ‘কিছু মানুষ শুধুমাত্র রাজনীতি করার জন্য সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে। এমন অনেক বড় বড় ইস্যু রয়েছে, যেগুলি নিয়ে আজ আলোচনা হওয়া উচিত। অন্তত রাজনৈতিক দলগুলির অন্য কোনও মানুষের ধর্ম, কিংবা কারও সম্প্রদায় নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়। এটা একেবারেই ব্যক্তিগত বিশ্বাসের জায়গা।’
মাংস নিষিদ্ধ করা নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তাকে এককথায় ‘ফালতু’ বলে উড়িয়ে দেন চিরাগ। তিনি মনে করিয়ে দেন, আমাদের দেশে, আমাদের সমাজে শত শত বছর ধরে বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে শান্তিতে বসবাস করে এসেছেন। কোনও সমস্য়া হয়নি।
এই প্রেক্ষিতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘এসবই একেবারে ফালতু কথা। এসবের কোনও প্রয়োজনই নেই। শত শত বছর ধরে এসব হয়ে আসছে। এখানে প্রত্যেক ধর্মবিশ্বাসী মানুষই সৌভ্রাতৃত্বের সঙ্গে এবং খুব সাধারণভাবে একসঙ্গে বসবাস করে আসছেন। কে কোথায় নমাজ পড়বেন, নবরাত্রির সময় (মাংসের) দোকান খোলা থাকবে না বন্ধ থাকবে, এসবই একেবারে ফালতু আলোচনা। এসব নিয়ে আলোচনার কোনও প্রয়োজনই নেই।’
এরপরই চিরাগ একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন, তিনি বলেন, যদি ধর্মীয় সংস্থা এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলি এই সমস্ত বিষয় নিয়ে পরস্পরের বিষয়ে মাথা ঘামানো বন্ধ করে দেয়, তাহলেই ৯০ শতাংশ সমস্যা মিটে যায়।
তাঁর কথায়, ‘যেদিন থেকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে আড়াল করা বন্ধ করে দেবে, এবং যেদিন থেকে রাজনীতিকরা ও রাজনৈতিক দলগুলি ধর্মীয় আস্থা নিয়ে হস্তক্ষেপ করা বন্ধ করবে, সেদিন থেকেই প্রায় ৯০ শতাংশ সমস্যা মিটে যাবে। রাজনীতির জন্য যখন বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়, তখনই গন্ডগোল শুরু হয়।’
প্রসঙ্গত, বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের মইহার জেলা প্রশাসনের তরফে একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে মইহার পুরনিগম এলাকায় নবরাত্রি চলাকালীন ৩০ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল (২০২৫) পর্যন্ত মাছ, মাংস ও ডিমের বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
গত শুক্রবার ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএসএস)-এর ১৬৩ নম্বর ধারা অনুসারে এই নির্দেশিকা জারি করেন মইহারের মহকুমাশাসক বিকাশ কুমার সিং। যে ধারায় বলা হয়েছে, অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে এবং বিপদ ঘটতে পারে, এমন সম্ভাবনা থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে যেকোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে! এই প্রেক্ষাপটে চিরাগ পাসওয়ানের মন্তব্য নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।