বাংলাদেশ সেনায় অভ্যুত্থানের জল্পনা ঘিরে জোর কানাঘুষো শোনা গিয়েছে বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই। বিভিন্ন রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, বাংলাদেশি সেনা প্রধানকে সরানোর জন্যে নাকি ছক কষা হচ্ছে। তবে সেই সব জল্পনার মাঝেই শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠ এক সেনা কর্তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করল ইউনুস সরকার। রিপোর্ট অনুযায়ী, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাক্তন নিরাপত্তা প্রধান মহম্মদ মুজিবুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী তাসরিন মুজিবের ‘অবৈধ’ সম্পদের তদন্ত করতে গিয়ে দুটি ফ্ল্যাট, ১০টি প্লট ও দুটি বাড়ির সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়াও একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেরও হদিশ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সেই সব সম্পত্তি এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
ক্ষমতা পরিবর্তনের পর বরখাস্ত হওয়া সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মুজিবুর। সেই মুজিবুরের সম্পত্তি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। এরই ভিত্তিতে ন্যাশনাল অ্যান্টি-গ্রাফ্ট এজেন্সি মুজিবুর এবং তাঁর স্ত্রীর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার জন্যে আবেদন জানিয়েছিল। এরই সঙ্গে তাঁদের ৩০টিরও বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করার জন্যেও আবেদন জানানো হয়েছিল। ইদের ছুটি শেষ হতেই সেই নিয়ে পাকাপাকি পদক্ষেপ করা হল। জানা গিয়েছে, মুজিবুর এবং তাঁর স্ত্রীর ৩৪টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশের আদালত। জানা গিয়েছে, এই অ্যাকাউন্টগুলিতে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৯৯ হাজার বাংলাদেশি টাকা আছে। সঙ্গে তাঁদের নামে থাকা দু’টি ফ্ল্যাট এবং প্রায় ৭০ একর জমিও ক্রোক করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। দুদকের ডেপুটি ডিরেক্টর মহম্মদ সিরাজুল হক ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মুজিবুরের স্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং অস্থাবর সম্পদের সঙ্গে লেনদেন সীমিত করার আদেশ চেয়ে আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদন মঞ্জুর করে নির্দেশ জারি করেন বিচারক।
উল্লেখ্য, বরখাস্ত হওয়ার আগে মুজিবুর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (ARTDOC)-এর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি এর আগে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য দায়ী বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (SSF) মহাপরিচালকের পদেও দায়িত্ব সামলেছিলেন। ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামি লিগ সরকার গদিচ্যুত হওয়ার এক মাস পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে ১০ সেপ্টেম্বর মুজিবুরকে বরখাস্ত করে। হলি আর্টিজান সন্ত্রাসী হামলার পরে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এর নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পরিচিত এই সেনা কর্মকর্তা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক পদেও দায়িত্ব সামলেছিলেন।