মীরাটের পর এবার উত্তরপ্রদেশের বিজনৌর। সরকারি চাকরি হাতাতে রেলকর্মী স্বামীকে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ উঠেছে স্ত্রীর বিরুদ্ধে। নিহত দীপক কুমার ভারতীয় রেলওয়েতে টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অভিযুক্ত স্ত্রী এমনভাবে স্বামীকে মারার পরিকল্পনা করেছিলেন যে, সেটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালানো যায়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। গত মাসেই উত্তরপ্রদেশের মীরাটের মার্চেন্ট নেভি অফিসার সৌরভ রাজপুতের হত্যাকাণ্ডে তোলপাড় হয়েছিল গোটা দেশ। আবারও একই রাজ্যে এমন নৃশংস ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ২০২৪ সালের ১৭ জুন শিবানি ও দীপক প্রেম করে বিয়ে করেন।তাদের ছয় মাসের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তবে বিয়ের পর শিবানি বেশিরভাগ সময় নিজের বাবার বাড়িতেই থাকতেন। কিছুদিন আগে তারা আদর্শনগরে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকতে শুরু করে। যদিও দীপক রেল কোয়ার্টার পেয়েছিলেন। গত শুক্রবার ভাড়া বাড়িতেই মৃত্যু হয় দীপকের। এএসপি সিটি সঞ্জীব বাজপেয়ী জানিয়েছেন, শিবানি তাঁর শ্বশুরবাড়িতে ফোন করে জানান যে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে দীপকের। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হাসপাতলে গিয়ে দীপকের মৃতদেহ দেখতে পান তাঁর ভাই।
এরপরেই দীপকের মৃত্যু নিয়ে তাঁর স্ত্রীয়ের বয়ানে সন্দেহ হয় পরিবারের। আর সেই সন্দেহের ভিত্তিতে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়। পাশাপাশি দীপকের দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানোর অনুরোধ করে তাঁর পরিবার। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট যখন হাতে পায় পুলিশ, তখন তারা দেখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়নি দীপকের। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। তারপরই শিবানিকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ।
জেরায় পুলিশ জানতে পেরেছে, দীপকের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলেন শিবানি। দীপক অচৈতন্য হয়ে পড়লে তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করেন। তারপর সেই দেহ নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কাটানোর পর হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে শিবানি প্রথমে এক যুবকের নাম জানান। কিন্তু সে শিবানির সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করেন। পরে পুলিশ দীপকের এক আত্মীয়ের সঙ্গে শিবানির সম্পর্কের খোঁজ পায়। পুলিশের অনুমান, এই ঘটনায় এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে।
দীপকের মা পুষ্পা বলেন, ‘শিবানি আমাদের বাড়িতে থাকতে চাইত না। ওর নজর ছিল দীপকের সরকারি চাকরিতে। শিবানির প্রেমিক ছিল এবং সে দীপককে সরিয়ে দিয়ে তার সঙ্গে সংসার করতে চেয়েছিল।’ অন্যদিকে দীপকের কাকা বিশাল বলেন, ‘আমার ভাইপোকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। সে রেলে কাজ করত। তার স্ত্রী তাকে খুন করেছে। সে নিজেই দোষ স্বীকার করেছেন, কিন্তু সে একা দীপককে খুন করতে পারে না। এর সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত। টাকার জন্য নাকি চাকরি পাওয়ার জন্য দীপককে খুন করেছে, তা বুঝতে পারছি না। আমরা চাই শিবানীর শাস্তি হোক।’