একটা লাথি! আর তাতেই খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন কসবা থানার সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) রিটন দাস। গত বুধবার (৯ এপ্রিল, ২০২৫) কসবার ডিআই অফিসে বিক্ষোভরত এক শিক্ষকের পেটে লাথি কষিয়ে আজ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে তিনি সমালোচিত হচ্ছেন। এমনকী, তাঁর এমন আচরণের জন্য পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসনকেও চরম অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে।
কিন্তু, কে এই রিটন দাস? কী বলছে পুলিশ মহল? সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা তথ্য অনুসারে – রিটনের সহকর্মীরাই বলছেন – তাঁরা মাথা নাকি ‘একটু বেশিই গরম!’ কিন্তু, তা বলে চাকরিহারা, আন্দোলনরত শিক্ষকের পেটে লাথি মারবেন তিনি? এটা একজন উর্দিধারীর আচরণ হতে পারে কখনও? এই প্রশ্নের উত্তর আগেই দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘অন রেকর্ড বলছি। এটা ঠিক হয়নি। বিষয়টা তদন্ত করে দেখা হবে।’
পরবর্তীতে এই মনোজ ভার্মাই শুধুমাত্র এই ঘটনায় আলাদা করে তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু, শেষ পাওয়া খবর অনুসারে – এসআই রিটন দাসের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে শোনা যায়নি।
পুলিশ মহল সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, মধ্য চল্লিশের রিটন দাস আদতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার বাসিন্দা। এবং তিনি আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজের প্রাক্তনী। তাঁর স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। এবং তাঁর এই ‘একটু বেশি মাথা গরম’-এর জন্যই এর আগেও একাধিকবার নানা ঝামেলায় জড়াতে হয়েছে তাঁকে।
যেমন – একবার তদন্তের কাজে শিলিগুড়ির একটি ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে তাঁকে কাজ শুরু করার আগে কিছুক্ষণ বসে থাকতে হয়েছিল। অভিযোগ, অপেক্ষা একটু দীর্ঘ হতেই নাকি চটে লাল হয়ে যান রিটন। ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সঙ্গে রীতিমতো গন্ডগোল শুরু হয় তাঁর। এমনকী, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাঙ্কের কর্মীদের ভয় দেখানো ও গ্রেফতারির হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে।
রিটনের এমন আচরণের জন্যই তাঁকে দীর্ঘদিন থানায় ডিউটি অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছিল না বলে জানা গিয়েছে। বদলে তাঁকে নাকাচেকিং-সহ রাস্তার বিভিন্ন ডিউটি দেওয়া হত। কিন্তু, সেখানেও গাড়ির চালকদের সঙ্গে তাঁর ঝামেলা নাকি লেগেই থাকত। ফলত, সম্প্রতি তাঁকে ফের থানার ডিউটিতে ফেরানো হয়।
তবে, ‘একটু বেশিই মাথা গরম’ হলেও তদন্তকারী অফিসার হিসাবে রিটনের প্রশংসাও শোনা গিয়েছে পুলিশ মহলে। যেমন – এর আগে তিনি যখন আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় ছিলেন। সেই সময় একটি মার্ডার মিস্ট্রি সল্ভ করেছিলেন শিক্ষকের পেটে লাথি মারা এই রিটনই।
ঘটনা হল – ৮৮ বছরের বৃদ্ধা বীণা মজুমদার ছিলেন বেহালার বাসিন্দা। তিনিই খুন হয়েছিলেন। সেই ঘটনার তদন্তকারী অফিসার ছিলেন রিটন দাস। তাঁর তদন্তেই উঠে আসে, ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগসাজশ করে বীণার ছেলে তাঁর মাকে খুন করে এবং সেই দেহ টুকরো করে প্রায় ৩ বছর ধরে ফ্রিজারে সংরক্ষণ করে রেখে দেয়!
এছাড়াও, একটি অভিজাত আবাসনে ঘটেছিল হাই-প্রোফাইল একটি চুরির ঘটনা। সেই মামলায় পঞ্জাবের জলন্ধর থেকে অভিযুক্তকে পাকড়াও করে এনেছিলেন এই রিটন দাস।
কিন্তু, প্রশ্ন হল – এসআই রিটন দাস তাঁর কাজে যতই দক্ষ হোন না কেন, তা বলে কোনও মানুষকে লাথি মারার ছাড়পত্র কি তিনি পেয়ে যান? তা যে তিনি পান না, তা ইতিমধ্যেই পুলশ কমিশনার ও রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের মন্তব্যে স্পষ্ট। তাঁরা দু’জনই স্বীকার করেছেন, এমন আচরণ মোটেও কাম্য নয়।
অন্যদিকে, কসবা ডিআই অফিসে চাকরি বাতিলের প্রতিবাদে সামিল যে শিক্ষক সেদিন রিটন দাসের লাথি খেয়েছিলেন, তিনি হলেন – দক্ষিণ ২৪ পরগনার কেওড়াখালি নকুল সহদেব হাইস্কুলের শিক্ষক অমিতরঞ্জন ভুঁইয়া। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, তিনি কোনও অপরাধ করেননি। তা সত্ত্বেও তাঁকে এভাবে অত্যাচারিত ও অপমানিত হতে হয়েছে। তাই তিনি দোষী পুলিশকর্মীর শাস্তি চান।