যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে জান্তার বিমান হামলা! বহু হতাহত

Spread the love

ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মিয়ানমারে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ফের বিমান হামলা চালিয়েছে জান্তা বাহিনী। এতে নতুন করে আরও অন্তত ৩০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েক ডজন।চলমান গৃহযুদ্ধের মধ্যে সপ্তাহ দুই আগে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে মিয়ানমারে। এতে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি তিন সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম সহজ করার লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন সেনা কর্তৃপক্ষ গত ২ এপ্রিল সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এমআরটিভিতে সামরিক বাহিনীর হাইকমান্ডের ঘোষণাটি প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, যুদ্ধবিরতি ২২ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এবং ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি সমবেদনা প্রকাশের লক্ষ্যে এই চুক্তি করা হয়েছে।

চীন ও জাতিসংঘের আহ্বানে কথিত ২০ দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেও জান্তা বাহিনী নিজেরাই সেই যুদ্ধবিরতি মানছে না। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেই প্রতিরোধ বাহিনীর পাশাপাশি বেসামরিক মানুষদের লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

দ্য ইরাবতীর এক প্রতিবেদন মতে, জান্তা বাহিনীর নৃশংসতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা কাওলিন ইনফো জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সাগাইং অঞ্চলের কাওলিন টাউনশিপের ইন পিন হ্লা গ্রামের একটি স্কুলে জান্তা যোদ্ধারা দুটি ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমা নিক্ষেপ করে, যার ফলে এক শিশুসহ তিনজন নিহত হয়।

এর আগে বুধবার বিকেলে উত্তর সাগাইং অঞ্চলের ওনথো টাউনশিপ সংলগ্ন নানখাম গ্রামে জান্তা বিমান বাহিনী একটি গ্রামের খাবারের দোকান এবং একটি সরকারি হাসপাতালের কাছে একটি ইন্টারনেট ক্যাফেতে বোমা হামলা চালায়, যার ফলে শিশুসহ বেশ কয়েকজন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওইদিন একাধিক যুদ্ধবিমান আবারও বিমান হামলা চালায়। কাওলিন ইনফোর তথ্য মতে, হামলায় নিহতের সংখ্যা ২০ ছাড়িয়ে যায়। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন শিশুও ছিল। এছাড়া আরও প্রায় ৫০ জন আহত হয়।

বেসামরিক জাতীয় ঐক্য সরকারের মানবাধিকার মন্ত্রণালয়ের এক হিসেবে, ভূমিকম্পের ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে গত ২৮ মার্চ থেকে ৮ এপ্রিলের মধ্যে মিয়ানমারের ১৫টি অঞ্চল ও রাজ্যের মধ্যে ১২টিতে ৯২টি গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলা চালানো হয়েছে, যার ফলে ৭২ জন নিহত ও ৯১ জন আহত হন।

ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত সাগাইং ও মান্দালয় অঞ্চলেই হামলা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইন্দাউ দখলে নিয়েছে কাচিন বাহিনী ও ছাত্র গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের যৌথ জোট। ফালাম শহরও হাতছাড়া করেছে জান্তা। পাল্টা জবাব দিয়েছে বিদ্রোহীরাও। জান্তা বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে কারেনি, আরাকান ও পিপলস ডিফেন্স ফোর্স। 

এদিকে ভূমিকম্পে প্রাণহানি ৩ হাজার ৬৪৫ ছাড়ালেও জান্তা সরকার ব্যস্ত নির্বাচনী প্রস্তুতিতে। ডিসেম্বরে ভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। আগামী ৯ মে’র মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের আহ্বান জানানো হয়েছে। যদিও ২০২০ সালের বিজয়ী দল এনএলডিসহ ৪০টি দলকে ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ করেছে জান্তা প্রশাসন।

দেশটিতে ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত ধ্বংস হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার ঘরবাড়ি, ৫ হাজার প্যাগোডা ও ২ হাজারের বেশি সরকারি ভবন। ক্ষতিগ্রস্ত ৬০টির বেশি টাউনশিপে ১ কোটি ৭০ লাখের বেশি মানুষ বিপর্যস্ত। অভিযোগ উঠেছে, জান্তা নিয়ন্ত্রিত এলাকার বাইরের ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান গোপন করছে সামরিক সরকার। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *