সম্পর্ক টেকেনি। তা বলে তার এমন প্রতিশোধ? ঘটনার সবটা জেনে তাজ্জব হয়ে গিয়েছে পুলিশও। অন্যদিকে, প্রাক্তন প্রেমিকাকে জব্দ করতে গিয়ে শেষমেশ হাজতে যেতে হয়েছে অভিমানী প্রেমিককেও। যদিও শেষমেশ আদালতের এজলাসে দু’জনের মধ্য়ে মিটমাট করিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, তারপরও প্রাক্তনকে প্রেমিকের হুঁশিয়ারি, তিনি যেন তাঁর বর্তমান প্রেমিকের সঙ্গে কোনও ছবি ফেসবুকে পোস্ট না করেন!
যে প্রেমিকের কথা এখানে বলা হচ্ছে, সেই যুবকের নাম সুমন সিকদার। নদিয়ার রানাঘাটের বাসিন্দা সুমনের এক তরুণীর সঙ্গে আলাপ হয় কর্মসূত্রে। সেই সময় তাঁরা দু’জনই কলকাতার কোনও একটি সংস্থায় কাজ করতেন। সেই আলাপ অচিরেই বন্ধুত্ব ও প্রেমে পরিণত হয়।
সুমনের সেই প্রেমিকা কেনাকাটা করতে বেজায় ভালোবাসতেন। যে কারণে অনলাইন শপিংয়ে দীর্ঘক্ষণ ব্যস্ত থাকতেন তিনি। এমনকী এর জন্য সুমনকেও মাঝেমধ্যে গাঁটের কড়ি খসাতে হত বলে দাবি সূত্রের।
ইতিমধ্য়ে সম্প্রতি এই যুগলের মধ্য়ে নানা কারণে মনোমালিন্য হয় এবং শেষমেশ সম্পর্ক ভেঙে। সূত্রের দাবি, এরপরও প্রাক্তনের সঙ্গে মোবাইলে ও নানাভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন সুমন। কিন্তু, তরুণী তাঁর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে দেন। আর তাতেই ক্ষেপে যান সুমন। শপিং-প্রেমী প্রেমিকা শায়েস্তা করতে তাঁর অফিসের ঠিকানায় পরপর ৩০৮টি পার্সেল পাঠান তিনি। যার সবকটাই ছিল ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ ব্যবস্থাপনায় কেনা।
অর্থাৎ – সুমনের প্রেমিকাকে নিজের টাকা খরচ করে সেইসব পার্সেল নিতে হচ্ছিল। জানা গিয়েছে – মোট ৩০৮টি পার্সেলের দাম ছিল প্রায় ৯ লক্ষ টাকা! যা দেখে চোখ কপালে উঠে যায় ওই তরুণীর। এরপরই তিনি কলকাতার লেক টাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এবং তার ভিত্তিতে সুমনকে গ্রেফতারও করা হয়। তিনি স্বীকার করেন, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় এভাবেই শপিং-পাগল প্রেমিকাকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন তিনি।
অন্যদিকে, সুমনের প্রাক্তন প্রেমিকা জানান, প্রথম থেকেই তাঁর সন্দেহ হয়েছিল যে এই কাণ্ড তাঁর প্রাক্তন প্রেমিক ছাড়া আর কেউ করছেন না। কিন্তু, প্রথমে বিষয়টি নিয়ে হইচই করতে চাননি তিনি। পরে টাকার অঙ্ক যখন বাড়তে থাকে, তখন আর চুপ করে বসে থাকতে পারেনি তরুণী। একপ্রকার বাধ্য হয়েই পুলিশের সাহায্য নেন তিনি।
তদন্তে উঠে আসে, সুমন একাধিক ভুয়ো ডিজিট্যাল অ্য়াকাউন্ট তৈরি করে তার সাহায্যে বিভিন্ন শপিং অ্য়াপ থেকে প্রথমে নানা ধরনের দামি পণ্য কিনতেন। তারপর সেটার ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ মোড বজায় রেখে ডেলিভারি অ্য়াড্রেসের জায়গায় প্রাক্তন প্রেমিকার অফিসের ঠিকানা দিয়ে দিতেন।
আজ (শুক্রবার – ১১ এপ্রিল, ২০২৫) সুমনকে আদালতে পেশ করে পুলিশ। সেখানেই দুই প্রাক্তনের মধ্যে ঝামেলা মিটিয়ে দেওয়া হয়। তরুণী বলেন, ভবিষ্যতে সুমন যেন কখনও তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করার চেষ্টা না করেন। আর সুমন বলেন, ‘ফেসবুকে বর্তমানের সঙ্গে কোনও ছবি পোস্ট করবি না!’