মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভের জেরে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল শুক্রবার। সেই ঘটনায় হয়েছিল একাধিক জন, তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে বাবা-ছেলেকে তাদের বাড়িতে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে। সেই তিনজনেরই মৃত্যু ঘটেছে বলে দানা গিয়েছে। মৃত তিনজনই সামশেরগঞ্জের বাসিন্দা। এর মধ্যে এক কিশোরকে চিকিৎসার জন্যে কলকাতায় পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়েছিল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। এদিকে দাবি করা হয়েছে, আজও মুর্শিদাবাদে গুলি চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শূন্যে গুলি ছুড়েছিল বিএসএফ। সেই ঘটনাতে নাকি ২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। তবে এই বিষয়ে সরকারি ভাবে কোনও কিছু বলা হয়নি। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়া বার্তায় সকলকে শান্ত থাকার বার্তা দিয়েছেন। অপরদিকে পশ্চিবঙ্গের ডিজিপি তাণ্ডবকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এদিকে সামশেরগঞ্জে বাবা-ছেলে খুনের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ স্থানীয়দের। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দেহ উদ্ধার করতে গেলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। এলাকায় এখন বিএসএফ টহল দিচ্ছে। জানা গিয়েছে, সামশেরগঞ্জের রানিপুরের জাফরাবাদে ঘটনাটি ঘটেছে। অভিযোগ, বাবা ও ছেলেকে প্রথমে পেটানো হয়েছে, তারপর ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়। এরপর জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বাড়ি ও টোটো। অভিযোগ, পুলিশকে বারবার ফোন করা হলেও পুলিশ আসেনি।
এর আগে জানা যায়, শনিবার সকাল পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিকই ছিল মুর্শিদাবাদে। তবে বেলা গড়াতেই ফের হিংসা ছড়ায় সেখানে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ধুলিয়ান পুরসভাতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এদিকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো হয় এবং পরে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে ফারাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলামের দাদা আলির বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকী বিধায়ককেও হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। এদিকে মুর্শিদাবাদে হিংসার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি এলাকায় টহল দিচ্ছে বিএসএফ।
এর আগে শুক্রবার পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। রেল স্টেশন থেকে শুরু করে জাতীয় সড়ক জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছিল ওয়াকফ প্রতিবাদীরা। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠিয়েছে বিএসএফ। অপরদিকে গুজব ছড়ালে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে পুলিশ। এদিকে বিজেপির দাবি, আমতলা থেকে মুর্শিদাবাদ, সর্বত্রই পুলিশ ‘মার খাচ্ছে’। এই আবহে সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে গেরুয়া শিবির। জানা যায়, গতকাল পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট বৃষ্টি করে বিক্ষোভকারীরা। দাবি করা হয়েছে, গতকাল পুলিশ-জনতার খণ্ডযুদ্ধে জখম ফরাক্কার এসডিপিও মনিরুল ইসলাম খান। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়। লাঠিচার্জও করে পুলিশ। এরপরে সাজুরমোড়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি বোমা বর্ষণ করে উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা। এর মাঝেও প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে পুলিশ পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করেছিল সেখানে। তবে ওয়াকফ আন্দোলনকারীদের রোষ আরও বাড়লে অনেক পুলিশকর্মীকেই প্রাণ বাঁচাতে মসজিদে আশ্রয় নিতে হয়েছিল বলে দাবি করা হয়।