জোসে মোলিনা মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কোচ হয়ে আসার পর এই নিয়ে দুটি ট্রফি জিতল সবুজ মেরুন শিবির। আরেকটি প্রতিযোগিতা ডুরান্ড কাপেও বাগান রানার্স আপ হয়েছিল। এবারের আইএসএলে বাগান যেন ছিল অপ্রতিরোধ্য ঘোড়া। যখন দরকার পড়েছে, মোলিনার বেশ কিছু পরিবর্তনই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
আইএসএল কাপ ফাইনালেও একটা সময় মোহনবাগানের খেলা ডানা বাঁধছিল না। তবে তখনও ঘামড়ে যাননি মোলিনা। বরাবরের মতোই মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন। ঠিক সময় আশিক কুরুনিয়ান এবং সাহাল আবদুল সামাদকে নামাতেই খেলার রং বদলে যায়। এরপর টানা আক্রমণ করতে থাকে মোহনবাগান, শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতে ট্রফি জেতে বাগানই।
এই ট্রফি জয়ের সঙ্গে মোহনবাগান এমন অনেক নজির গড়েছে যেগুলো রেকর্ড। যেমন প্রথম দল হিসেবে তাঁরা হোম গ্রাউন্ডে ট্রফি জিতল। সব থেকে বেশি জয় তাঁদের। টানা তিনবারের মধ্যে দুবারই চ্যাম্পিয়ন। ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে জোসে মোলিনা জানালেন এক গোল খাওয়ার পরেও ফুটবলারদের তিনি ঠিক কি বলে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
এছাড়াও বাগান সমর্থকদের একটা বিষয়ে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছই, আমার সঙ্গে মোহনবাগানের চুক্তি ছিল এক বছরের। যদি ওরা আমায় রাখতে চায়, তাহলে এক বছরের চুক্তি আরও বাড়াবো, না হলে চলে যাব। এবার আমি আলোচনায় বসব। তবে আগামী মরশুমে লড়াই আরও কঠিন হতে চলেছে। তবে সমর্থকদের খুশি করার জন্য যা যা দরকার, সবই করব ’।
জোসে মোলিনা বলছিলেন, ‘এক গোল খাওয়ার পরেও আমি ফুটবলারদের বলেছিলাম, মাথা ঠান্ডা রাখতে। নিজেদের ওপর আস্থা রেখেই লড়াই করে জেতে। সেটা ওরা করতে পেরেছে বলেই আজকে ম্যাচ জিততে পেরেছি। ডুরান্ড কাপের ফাইনালে হারের পরেও ফুটবলারদের নিজের ওপর আস্থা, ভরসা রাখতে বলেছিলাম। সেটা পেরেছি বলেই আজ আমরা ট্রফি জিততে পারলাম। বেঙ্গালুরু খুব ভালো দল, ওরা বল পজেশন বেশি রাখে নিজেদের পায়ে। তবে আমাদের ফুটবলাররা সব সময়ই প্রতিপক্ষের রক্ষণে মানে ফাইনাল থার্ডে বেশি অ্যাটাক করে। এই মরসুমে আমরা বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে চারটি ম্যাচ খেলেছি, তিনটেই জিতেছি। ডুরান্ডের সেমিতেও ওদের পেনাল্টি শ্যুটআউটে হারিয়েছি ’।
এটাই তি তাঁর কোচিং কেরিয়ারের সেরা মরশুম? দ্বিমুকুটজয়ী কোচ বলছেন, ‘আমি কখনই ট্রফি জিতে কোচিং কেরিয়ারের তুলনা করি না। আগেও আমি হংকংয়ে থাকার সময় তিনটি ট্রফি জিতেছিল। প্রতিদিনই আমি শেখার চেষ্টা করি। মোহনবাগানেও সেটাও করেছি। আশা করব আগামী দিনে আমি আরও ভালো কোচ হয়ে উঠতে পারব এবং কোচ হিসেবে আরও অনেক সাফল্য পাব। আজকের ম্যাচে যেমন লিস্টন, অনিরুদ্ধকে একটু ক্লান্ত লাগছিল, তাই সাহাল-আশিকদের নামিয়েছিলাম। আমাদের দলে অনেক ভালো মানের ফুটবলার রয়েছে। আসলে ফুটবলটা হচ্ছে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার এবং পরিশ্রম করে যাওয়ার খেলা। মরশুম শুরুর আগে আমরা ভাবতে পারিনি আইএসএলে দুটি ট্রফিই জিতব। কিন্তু ম্যানেজার, ফুটবলার সবাই পরিশ্রম করেছি, তাই সাফল্য এসেছে ’।
ম্যাচে রেফারিং এবং পেনাল্টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইস্টবেঙ্গল ও বেঙ্গালুরুর সমর্থকরা। যদিও তা উড়িয়ে মোলিনা বলছেন, ‘আমরা কোনও ম্যাচের পরেই অজুহাত দিই না। বেঙ্গালুরুতে ৩ গোলে হেরেও অজুহাত দিইনি, বা জামশেদপুরের কাছে প্রথম লেগে হেরেও অজুহাত দিইনি। কারণ ভালো খারাপ সবটাই ফুটবলের অঙ্গ,সেটা নিয়েই চলতে হয় ’।
এরপর মোহনবাগানের তারকা ফুটবলার দিমিত্রি পেত্রাতোসকে নিয়েও মুখ খোলেন মোলিনা, তিনি জানান, ‘ফুটবলে কখনই সবাইকে খুশি করে চলা সম্ভব নয়। দিমিত্রি পেত্রাতোস নিশ্চয় আমার ওপর অখুশি। ১১জনের বেশি তো মাঠে নেমে খেলতে পারে না, তাই যেই জায়গায় যে বেশি কার্যকরি, তাঁকেই খেলানোর চেষ্টা করি। ওকে সাধারণত শেষের দিকেই নামাই, আজকেও ২০ মিনিট মতো মাঠে ছিল। তাই আমায় নিয়ে কেউ খুশি না হলেও, আমি ফুটবলারদের নিয়ে খুশি ’।