একদিকে যখন সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ ও আন্দোলনের জেরে মুর্শিদাবাদের নানা অংশে অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়ছে, তা সামাল দিতে এবং শান্তি ফেরাতে প্রশাসনিক চেষ্টা চলছে, পুলিশের পাশাপাশি মাঠে নেমেছে বিএসএফ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী, সেই প্রেক্ষাপটে হঠাৎই রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে নিশানা করলেন খড়গপুর সদরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়। মেদিনীপুরে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে হঠাৎই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় নিজের ক্ষোভ উগরে দেন অভিনেতা থেকে নেতা হয়ে ওঠা এই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তাঁর মতে, পশ্চিমবঙ্গে শান্তি ফেরাতে হলে আগে এই রাজ্যপালকে পরিবর্তন করতে হবে!
মুর্শিদাবাদের অশান্তির জেরে ইতিমধ্য়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার, রাজ্যের একাংশে আফস্পা (বিশেষ সামরিক আইন) কার্যকর করার মতো দাবি নানা মহলে উঠতে শুরু করেছে। হিরণের গলাতেও সেই সুর শোনা যায়। তিনি বলেন, ‘গত চারবছর-পাঁচবছর হয়ে গেল… পশ্চিমবঙ্গের পাড়ার দোকানে, চায়ের দোকানে, বাসের মধ্যে, রেল স্টেশনে, রাস্তায়, হাটে-বাজারে একটাই আলোচনা চলে যে কেন্দ্রীয় সরকার কেন পশ্চিমবঙ্গে এখনও রাষ্ট্রপতি শাসন নিয়ে আসছে না?’
এরপরই হঠাৎ করেই রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে কটাক্ষ করেন হিরণ। তাঁর দাবি, বাংলার মানুষের দুঃখ, যন্ত্রণা কিছুই নাকি বাংলার বর্তমান রাজ্যপাল বোঝেন না। তাই তিনি মাঝেমধ্য়েই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অ-আ-ক-খ শিখতে যান!
হিরণ বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের সাংবিধানিক অভিভাবক হলেন রাজ্যপাল। যে রাজ্যপাল এখানকার নন, তিনি কেরালা নামক একটি রাজ্য থেকে এসেছেন। ফলে তিনি অ-আ-ক-খ শেখার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে বসে থাকেন। ফলে ওঁর সময় নেই যে পশ্চিমবঙ্গের মা-বোনেরা যে কাঁদছেন, পশ্চিমবঙ্গের মা-বোনেদের যে ইজ্জত লুটিয়ে যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের ভাই, মা-বোনেদের যে রক্তবন্যা বয়ে যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের গরিব মানুষের বাড়ি যে আগুনে জ্বলছে, সেদিকে না তাকিয়ে, তিনি মাঝেমধ্যেই অ-আ-ক-খ শিখতে যাচ্ছেন! সেই জন্য এই রাজ্যপাল পশ্চিমবঙ্গ থেকে চলে গেলে আমার মনে হয়, পশ্চিমবঙ্গের বিরাট উন্নয়ন হবে।’
এরপরই পূর্বতন রাজ্যপাল এবং বর্তমানে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়কে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন হিরণ। বলেন, ‘আগের যিনি রাজ্যপাল ছিলেন, জগদীপ ধনখড়জি, তিনি পশ্চিমবঙ্গকে রক্ষা করার জন্য বহু চেষ্টা করেছেন। এবং প্রচুর আন্দোলন করেছেন। আন্দোলন মানে তাঁর মতো করে করেছেন। তিনি বারবার গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে যে অস্বাস্থ্য(কর) পরিবেশ, সেটা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের এগিয়ে আসা উচিত।’
এরপর ফের একবার বাংলার বর্তমান রাজ্যপাল বোসকে তীব্র বাক্যবাণে বিদ্ধ করেছেন হিরণ। বলেছেন, ‘কিন্তু, এই রাজ্যপাল মানুষের, আমাদের কষ্ট দেখে তিনি বোধ হয় উল্লসিত হয়ে, তিনি গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কাছে অ-আ-ক-খ শিখছেন। সেই জন্য যদি পশ্চিমবঙ্গে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হয়, এই রাজ্যপালকে হয় পরিবর্তন করা উচিত, না হলে এই রাজ্যপালের ঘুম থেকে জেগে ওঠা উচিত!’
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, নিয়ম অনুসারে – কোনও রাজ্যের বাসিন্দা কখনও সেই রাজ্যের রাজ্যপাল হন না। তাঁকে অন্য রাজ্যেই যেতে হয় রাজ্যপালের দায়িত্ব পালন করতে। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসও সেই নিয়মের ব্যতিক্রম নন। তিনিও ভিনরাজ্যেই মানুষ। যদিও অতীতে চাকরিসূত্রে বাংলায় থাকার অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েছে।
আর, বাংলার রাজ্যপাল হওয়ার পর তিনি বাংলা ভাষা ও বর্ণমালা শেখারও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার জন্য রীতিমতো হাতেখড়ি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।
অন্যদিকে, মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ প্রতিবাদ ও আন্দোলনের জেরে হিংসার ঘটনা নিয়ে গত শুক্রবার (১১ এপ্রিল, ২০২৫) সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে তিনি বিশদে আলোচনা করেন। এবং তার পরদিনই (১২ এপ্রিল, ২০২৫) তাঁর নির্দেশে রাজভবনের তরফ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে চিঠি পাঠানো হয়। সূত্রের দাবি, সেই চিঠিতে হিংসা মোকাবিলা ও দমন করতে রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কেন্দ্রীয় সরকারকে পদক্ষেপ করার আবেদন জানানো হয়েছে।