মুর্শিদাবাদের ওয়াকফ হিংসায় ঘরছাড়া হয়েছিলন বহু মানুষ। বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে তাঁরা আছেন মালদার শিবিরে। এবার অভিযোগ উঠল, সেই সব ঘরছাড়া মানুষজনদের জোর করে স্থানীয় প্রশাসন সেখান থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। আর এই অভিযোগ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর দাবি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সম্প্রতি প্রশাসনকে জানিয়েছিল যে তারা ঘরছাড়াদের সঙ্গে দেখা করতে আসবে। এরপরই নাকি বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে স্থানীয় প্রশাসনের ওপরে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে।
এই নিয়ে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে সুকান্ত মজুমদার লেখেন, ‘বাংলায় এ কোন ধরণের একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? মুর্শিদাবাদে উগ্র ইসলামপন্থী জনতার দ্বারা নির্মমভাবে নির্যাতিত হিন্দু পরিবারগুলি বেঁচে থাকার জন্য মালদায় পালিয়ে যায়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রাজ্য কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি যে তারা ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে দেখা করতে আসছে… কিন্তু এখন স্থানীয় রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে, স্থানীয় প্রশাসনের চাপে ভুক্তভোগীদের জোরপূর্বক ক্যাম্প থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’
সুকান্ত লেখেন, ‘সরকার চাইছে না যে এনএইচআরসি কর্মকর্তারা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে দেখা করুক। এই ঘটনার ভয়াবহতা প্রকাশ করা থেকে বিরত রাখার জন্য তাদের সানো হচ্ছে। এটা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দমন! এটা কি শাসনব্যবস্থা নাকি অপরাধমূলক ভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা? কেন মমতা সত্যিটাকে কবর দিতে এত মরিয়া? তাঁর শাসনামলে কি হিন্দুদের জীবনের দাম নেই? নির্যাতিত নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানোর চেয়ে কি ইসলামপন্থী ভোট ব্যাঙ্ক রক্ষা করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? এটি কেবল একটি নৈতিক ব্যর্থতা নয় – এটি সাংবিধানিক শৃঙ্খলার সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার নিদর্শন। মানবাধিকার সংস্থাগুলিতে প্রবেশাধিকার বন্ধ করা, ভুক্তভোগীদের ভয় দেখানো, প্রমাণ মুছে ফেলা – সবই মমতা নিজের রাজনৈতিক আখ্যান রক্ষা করার জন্য করছেন। এটা লজ্জাজনক। ক্ষমার অযোগ্য।’
উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভের জেরে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল ১১ এপ্রিল থেকে। এই হিংসার জেরে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কিশোর আছে। সে গত ১১ এপ্রিল গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। এদিকে ১২ এপ্রিল সামশেরগঞ্জে বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ স্থানীয়দের। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দেহ উদ্ধার করতে গেলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। এলাকায় এখন বিএসএফ টহল দিচ্ছে। জানা গিয়েছে, সামশেরগঞ্জের রানিপুরের জাফরাবাদে ঘটনাটি ঘটেছে। অভিযোগ, বাবা ও ছেলেকে প্রথমে পেটানো হয়েছে, তারপর ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়। এরপর জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বাড়ি ও টোটো। অভিযোগ, পুলিশকে বারবার ফোন করা হলেও পুলিশ আসেনি।
এদিকে ১২ এপ্রিল ধুলিয়ান পুরসভাতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এদিকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো হয় এবং পরে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ধুলিয়ানে একটি শপিংমলে লুটপাট চালানো হয়। এদিকে ফারাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলামের দাদা আলির বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকী বিধায়ককেও হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুরের অফিসেও হামলা চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। এদিকে মুর্শিদাবাদে হিংসার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি এলাকায় টহল দিচ্ছে বিএসএফ।