সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন এলাকায় হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল গত ১১ এবং ১২ এপ্রিল। এই আবহে জেলার প্রায় সব তৃণমূল সাংসদ বিধায়করা ময়দানে নামেন। তবে দেখা মেলেনি বহরমপুরের সাংসদ ইউসুফ পাঠানের। তাঁর সংসদীয় এলাকায় কোনও হিংসার ঘটনা ঘটেনি বটে। তবে মুর্শিদাবাদের অন্যত্র হিংসা চলাকালীনই সোশ্যাল মিডিয়ায় চা খাওয়ার ছবি আপলোড করে ইউসুফ লিখেছিলেন, ‘আনন্দ উপভোগ’ করার কথা। যা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়। আর এবার জানা যাচ্ছে, মুর্শিদাবাদে ইউসুফের অনুপস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে দলেরই অন্দরে। এমনকী হিংসা নিয়ে ইউসুফ একটা বাক্যও ব্যয় করেননি, দেননি কোনও শান্তির বার্তা; যার জেরে তাঁকে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা জারি আছে এখনও।
মুর্শিদাবাদ জেলায় তিন লোকসভা সাংসদের তিনজনই তৃণমূল কংগ্রেসের – জঙ্গিপুরে খলিলুর রহমান, মুর্শিদাবাদে আবু তাহের খান এবং বহরমপুরে ইউসুফ পাঠান। ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই হিংসায় জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের সুতি, সামসেরগঞ্জ ও ধুলিয়ান এলাকার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ইউসুফ পাঠানের নির্বাচনী এলাকায় সরাসরি কোনও হিংসার ঘটনা না ঘটলেও হিংসা কবলিত অঞ্চলের থেকে খুব দূরেও নয়। তাই তাঁর অনুপস্থিতিতে শুধু বিরোধী দলেই নয়, তৃণমূলের অনেকেই ক্ষুব্ধ। এদিকে ইউসুফ যাঁকে হারিয়ে সাংসদ হয়েছিলেন, সেই অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে ময়দানে নেমে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে। তবে পাঠানের দেখা মেলেনি কোথাও। না মিলেছে তাঁর কোনও বার্তা।
এই বিষয়ে মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ইউসুফ পাঠানের অনুপস্থিতি ভুল বার্তা দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তিনি (ইউসুফ পাঠান) বহিরাগত, রাজনীতিতে নতুন। এতদিন দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। কিন্তু এটা মানুষের কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে। আমাদের সাংসদ, বিধায়ক এমনকি বুথ কর্মীরাও মাঠে নেমে মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন। সামসেরগঞ্জে শান্তি সভা হয়েছে। ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে পৌঁছেছি। সাংসদ খলিলুর রেহমানের পাশাপাশি তৃণমূলের বেশ কয়েকজন বিধায়ক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি (ইউসুফ পাঠান) অনুপস্থিত ছিলেন। কেউ বলতে পারে না যে – এটি আমার এলাকা নয় এবং তারা আমার লোক নয় এবং এ কারণেই আমি যাব না।’
এদিকে ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবিরও এই সময়ে মানুষের পাশে না থাকার জন্য পাঠানের প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলার সময় কবির বলেছিলেন যে পাঠান তাঁর খেয়ালখুশি অনুযায়ী কাজ করছেন। তাঁর কথায়, ‘তিনি একজন বিখ্যাত ক্রিকেটার যিনি গুজরাটে থাকেন। লোকসভা নির্বাচনে তিনি কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে জনগণের ভোটে পরাজিত করেছিলেন। এই ভদ্রলোক এখন ভোটারদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। তিনি তাঁর খেয়ালখুশি মতো আচরণ করছেন।’ হুমায়ুন কবির এমনও বলেছেন, রাজনীতিতে পাঠানের অংশগ্রহণ না বাড়লে তিনি দলীয় নেতৃত্বের দ্বারস্থ হবেন যাতে পরের বার তিনি টিকিট না পান। ভরতপুরের বিধায়ক এই নিয়ে বলেন, ‘ইউসুফ পাঠান এমপি হয়েছেন প্রায় এক বছর হয়ে গেছে। তিনি যদি তাঁর আচরণ পরিবর্তন না করেন এবং মানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা না করেন, তবে আমি তাঁর বিরুদ্ধে আমাদের দলের শীর্ষ নেতৃত্বের দ্বারস্থ হব। আমি চেষ্টা করব যাতে পরের বার তিনি দলের টিকিট না পান। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমূলক উদ্যোগের অংশ নেন না এবং এই জাতীয় সঙ্কটের সময়ও তিনি মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না।’ এদিকে স্থানীয়দের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউসুফ পাঠানকে শেষবার রমজান মাসে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় দেখা গিয়েছিল। তখন তিনি কয়েকটি ইফতার পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, ইউসুফ পাঠান গত ১২ এপ্রিল একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন ইনস্টাগ্রামে। তাতে দেখা যায়, সাদা প্যান্ট ও সাদা শার্ট পরে আছেন ইউসুফ। হাতে তাঁর এক কাপ চা। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আরামদায়ক বিকেল, চায়ে চুমুক, শান্তি। এই মুহূর্তে ডুবে আছি।’ তিনি সেখানে যখন চা উপভোগ করছিলেন, সেই সময় মুর্শিদাবাদে রক্ত ঝরছে। পুলিশ পর্যন্ত ‘মার খেয়েছে’ বলে অভিযোগ সেখানে। এই ইউসুফ পাঠান সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় ‘জয় হিন্দ, জয় বাংলা, জয় গুজরাট’ বলেছিলেন। তবে গুজরাটি এই ক্রিকেটারকে এহেন সংকটের সময় জেলায় দেখা যায়নি। এমনকী সোশ্যাল মিডিয়াতেও ইউসুফ এই হিংসা নিয়ে কোনও বার্তা পর্যন্ত দেননি। এর জেরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।