আরও কাছাকাছি বাংলাদেশ ও চিন। গতকাল (রবিবার – ২০ এপ্রিল, ২০২৫) রাজধানী ঢাকায় সরকারি অতিথি ভবন ‘যমুনা’-এ বাংলাদেশের বর্তমান কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চিনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। সেই বৈঠকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ‘ইতিবাচক’ আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যার মধ্যে অন্য়তম তিস্তা নদীর জল ব্যবহার সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা!
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম অনুসারে – ইউনুস এই বৈঠকে প্রসঙ্গে বলেছেন, সাম্প্রতিক চিন সফরে তাঁর সঙ্গে চিনা প্রশাসনের যে বিষয়গুলি নিয়ে তাঁর কথাবার্তা ও সমঝোতা হয়েছে, সেগুলি যাতে দ্রুত বাস্তবায়িত করা যায়, সেটাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এমনকী, চিন ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও পোক্ত করতে চিনা প্রেসিডেন্টকে তিনি নিজে আম উপহার পাঠাবেন বলেও জানিয়েছেন ইউনুস।
অন্যদিকে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক আদান-প্রদান আরও দৃঢ় করার পক্ষে সওয়াল করেছেন চিনা রাষ্ট্রদূতও। তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আরও দুই থেকে তিন বছর অপেক্ষা করতে চাই না। আমরা দ্রুত সেগুলির বাস্তবায়ন করতে চাই।’
কালের কণ্ঠ – অনুসারে – ইউনুসের দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, শীঘ্রই চিনের কাছ থেকে চারটি নতুন জাহাজ কিনবে বাংলাদেশ। চিনের আশ্বাস, সেই প্রক্রিয়া চলতি বছরের (২০২৫) জুন মাসের মধ্যেই সেরে ফেলা হবে। শুধু তাই নয়। চিনের বাণিজ্য মন্ত্রীও শীঘ্রই বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁর সঙ্গে আসবে ১০০ জন বিনিয়োগকারীর একটি প্রতিনিধিদল! সেই উপলক্ষে ছোট আকারে একটি বাণিজ্য সম্মেলনেও অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে।
এছাড়াও, মহম্মদ ইউনুস চান – বাংলাদেশের তরুণ সমাজ চিনা ভাষায় দক্ষ হয়ে উঠুক। তার জন্য বাংলাদেশে একটি চিনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এমনকী, তিস্তার জল ব্যবস্থপনা সংক্রান্ত একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েও রবিবারের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
দাবি করা হচ্ছে, তিস্তার জল ব্যবহার করা নিয়ে চিনের সঙ্গে ৫০ বছরের জন্য দীর্ঘমেয়াদি মাস্টার প্ল্যান করতে চাইছে বাংলাদেশ। বিষয়টি নিয়ে আগেও চিনের সঙ্গে কথা হয়েছে তাদের। রবিবারের বৈঠকে তা নিয়ে ফের একপ্রস্থ আলোচনা করা হয়েছে।
এছাড়াও, বাংলাদেশে ১ হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ, চট্টগ্রামে অত্যাধুনির বার্ন ইউনিট স্থাপন এবং চিনে গিয়ে চিকিৎসা করাতে যাতে বাংলাদেশি নাগরিকরা বিশেষ সুবিধা পান, তার জন্য দ্রুত ভিসা ইস্যু করার বিষয়গুলি নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এর পাশাপাশি, বাংলাদেশি কৃষিজ পণ্য চিনে রফতানি করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চলতি মরশুমে আম, এবং আগামী বছর থেকে ঢাকার পক্ষ থেকে চিনে কাঁঠাল রফতানি করা হবে। এই প্রসঙ্গে ইউনুস বলেন, ‘আমি নিজেই রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের কাছে এক ঝুড়ি তাজা আম পাঠাব।’